বাংলাদেশে প্রাপ্ত সবচেয়ে ছোট প্রজাপতি
আমাদের দেশের প্রজাপতির তালিকায় এটি সংযুক্ত হয়েছে বেশ কিছুদিন হয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসের ২৪ তারিখ এটি প্রথম কেরানীগঞ্জ থেকে নাসিফ সাদাত ও তাঁর দল এটি প্রথম নথি ভুক্ত করে।
লেখক- Amit Kumer Neogi
দিনটি ছিল ২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি। ছোট ভাই ডাঃ সাজিদ রেজওয়ান এবং আরাফাত রহমান খানের একান্ত অনুরোধে পাখি দেখতে গেলাম ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে। পাখি আমার খুবই প্রিয় কিন্তু কখনো পাখি দেখার জন্য আলাদা ভাবে বের হওয়া হয় না। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে শীতে কাঁপতে কাঁপতে কেরানীগঞ্জ পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওনা দিলাম মেঠো পথ ধরে। মিষ্টি রোদের আলো, কুয়াশায় সিক্ত মাটি আর কলকাকলি সত্যি যেন মনে হচ্ছিল আমরা স্বর্গের কোন বাগানে চলে এসেছি। চারিদিকে ঘন কুয়াশা আর তার মধ্যে তিলা মুনিয়া, ঘাস পাখির সাথে বিভিন্ন পাখির কলকাকলিতে দারুণ সময় কাটছিল। তবে আমার লক্ষ ছিল একটু ভিন্ন। সকাল ১০ টার দিকে সূর্যটা উঁকি মারতেই আমার মন উতলা হয়ে উঠল কারণ আমি কেরানীগঞ্জে এসেছি একটি বিশেষ প্রজাপতির খোঁজে। তবে এর দেখা পাবো কিনা জানতাম না। সকাল ১১ টা ৩০ সূর্য ঠিক তখন মাথার ওপর। আমি অনবরত পায়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ বালির মধ্যে ছোট একটা প্রজাপতি উড়তে দেখে দ্রুত কাছে গেলাম এবং বালির মধ্যে শুয়ে পড়লাম এটা কি তা দেখার জন্য। মুহুত্তেই আমার মন আনন্দে ভরে গেল। কারণ বাংলাদেশে প্রাপ্ত সবচেয়ে ছোট প্রজাপতিকে খুঁজে পেয়েছি আমি। এটা এতো ছোট যে চোখে দেখায় কষ্টকর। এরপর খুব সাবধানে ক্যামেরা নিয়ে কিছু ছবি তুলে ফেললাম তারপর সাজিদ ও আরাফাতকে ডাক দিলাম। তারাও কিছু ছবি নিয়ে নিল । এরপর আর বেশ কয়েকটার দেখা পেলাম। কেরানীগঞ্জে বহুবার এসেছি কিন্তু কখনোই এটাকে খুঁজতে কিন্তু পাই নি। প্রজাপতিটির ইংরাজি নাম Oriental Grass Jewel । এর বৈজ্ঞানিক নাম Freyeria putli। বাংলা নাম নেই। তবে এর বাংলা নাম দেওয়া যেতে পারে পূর্বদেশীয় ঘাস মণি বা রত্ন । আমাদের দেশের প্রজাপতির তালিকায় এটি সংযুক্ত হয়েছে বেশ কিছুদিন হয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসের ২৪ তারিখ এটি প্রথম কেরানীগঞ্জ থেকে নাসিফ সাদাত ও তাঁর দল এটি প্রথম নথি ভুক্ত করে। যদিও এই প্রজাপতিটি বাংলাদেশে পাওয়া যাবে এমন আশা আগেই উল্লেখ করেছিলেন প্রখ্যাত প্রজাপতিবিদ প্রয়াত টরবেন বি লারসেন ২০০৪ সালে তাঁর লেখা বাংলাদেশের প্রজাপতির তালিকায় যেটা প্রকাশ করা হয়েছিল IUCN থেকে । Oriental Grass Jewel এর পাখার ব্যাস ১৫ থেকে ২২ মিলিমিটার। পুচ্ছ পাখনার শেষের দিকে ৪ টি ধাতব রঙ্গের দাগ দেখা যায় যেটা প্রথমে কাল এবং পরে হলুদ রঙ দ্বারা চক্রাকারে বেষ্টিত থাকে। অন্যান্য গ্রাস ব্লু গুলর মতই এই প্রজাপতিটি উন্মুক্ত তৃণভূমিতে এদের বাসস্থান। এরা সাধারণত Boraginaceae এবং Fabaceae বর্গের উদ্ভিদের পাতায় ডিম পারে। তবে বাংলাদেশে এর Host Plant এখনও আবিষ্কৃত হয় নায়। এটি বাংলাদেশ তথা ভারতীয় মহাদেশে প্রাপ্ত সবচেয়ে ছোট আকারের প্রজাপতি। তবে ভারতে দুই প্রজাতির grass jewel পাওয়া যায় একটি Freyeria putli ও অন্যটি Freyeria trochylus । তবে আমাদের দেশে Freyeria trochylus এখনও পাওয়া যায় নি।
প্রজাপতি একটি সুস্থ বাস্তুতন্তের নিদর্শক। একটি প্রজাপতির অবস্থান ঐ অঞ্ছলে একটি নিদিষ্ট গাছের প্রাপ্ততার জানান দেয়। এছাড়া প্রজাপতি ফুল হতে মধু সংগ্রহ করার সময় এর পরাগায়ন ঘটায় যা আমাদের পরিবেশের একটি অপরিহার্য অংশবিশেষ। শুধু তাই নয় প্রজাপতি অন্য পশু পাখির খাদ্য হিসাবে খাদ্য শৃঙ্খলের একটি অপরিহার্য উপাদান। তবে আবাসস্থল ধ্বংস, গাছপালার দুষ্প্রাপ্যতা ধীরে ধীরে এর সংখ্যা ও প্রজাতির সংকোচন ঘটাচ্ছে। যেমন একসময় মিরপুর উদ্ভিদ উদ্যানে এক দিনে প্রায় ৬০-৮০ প্রজাপতির দেখা মিললেও বর্তমানে ২০ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া দুষ্কর। এর কারণটা হল সেখানে প্রজাপতির অনুষঙ্গী গাছের অভাব। তাই পরিবেশের সুস্থতার মাপকাঠি ধরে রাখতে হলে আমাদের প্রজাপতি সংরক্ষণের দায়ভার নিতে হবে। বেশী বেশী গাছ লাগাতে হবে এবং পুরানো গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।