শেখরলতা!
শেখর, শেখররায়, হুট করেই হাজির হতো সকালবেলা। কাঁধে ক্যামেরা, মাথায় টুপি। বলত- চলেন স্যারপার্কে, ফুলের ছবি তুলব। আমিও নাচুনিবুড়ি, তখনই বেরিয়ে পড়তাম।এমনটি কতবার হয়েছে লেখাজোখা নেই। ছবি তুলতে তুলতেই শেখর লেখক হয়ে গেল। পড়েছিল প্রাণিবিদ্যা, স্বপ্ন ছিল পাখি বিশেষজ্ঞ হবে, চলেও গিয়েছিল মুম্বাই, সালিম আলীর পাঠশালায়, ভর্তিরও অসুবিধা ছিলনা, কিন্তু…। যাক সে কথা। ‘যে শুনেছে কানে তাহার আহ্বান গীত’, তাকে ফেরাবে কে? দেশে ফিরে ঢুকে পড়ল অধ্যাপক মীজানুর রহমানের আলোর ইশকুল নটরডেম ন্যাচার স্টাডি ক্লাবে, হয়ে উঠল চৌকস নিসর্গী। বড় ভালোবাসত ফুল, পাখি আর প্রজাপতি। এসব নিয়ে লিখেছে মুগ্ধকর সব গল্পকথা। জীবনের তিনটি শ্রেষ্ঠ কর্ম- একটি সন্তান, একটি বৃক্ষরোপণ ও একটি গ্রন্থরচনা।তাও সম্পন্ন করল অচিরে। ব্যাংকের চাকরিটা নিয়ে শুরুতে ভোগান্তি হতো, নেশা ও পেশার দ্বন্দ্বটিও শেষ পর্যন্ত মিটিয়ে ফেলেছিল। ছেলেটিকে গড়তে চেয়েছিল নিজের আদলে। তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াত পার্কে, শিশুতোষ প্রকৃতি পাঠের বিদেশি বই কিনে দিত নীলক্ষেতের আড়ত ঘেঁটে।বড় সুখী সুন্দর মানুষ মনে হতো তাকে। গর্ব হতো শেখরকে সঙ্গী পেয়ে।
ভাবি, প্রকৃতির সঙ্গে যন্ত্রের চিরন্তন বৈরিতার শিকার হলো কি শেখর? কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত সেলফোন ব্যবহারের জন্যই কি মস্তিষ্কে কর্কটের এই মরণ কামড়?আমাদের শেষ দেখা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের প্রজাপতিমেলায়। সচল, হাসি খুশিদে খলাম; কিন্তু কর্কট বড়ই প্রতারক।
শেখর বনফুলের ছবি তুলত বেশি বেশি। দিনাজপুর থেকে আমার জন্যনিয়ে এসেছিল একটি বনলতা – Thanburgia fragrans সরু শক্ত লতা, ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত, সাদা গন্ধহীন ফুল ফোটে প্রায় সারা বছর, শীতকালেও। আমার বারান্দায় কয়েক বছর থেকেই আছে। আগে তেমন নজর দিইনি, এখন রোজই একবার কাছে যাই, ফুলগুলো দেখি। শেখর চলে যাওয়ার পর এটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। কোনো পোশাকি বাংলা নাম নেই, তবে আমার কাছে শেখর লতা হয়ে থাকবে বাকি জীবন।
-দ্বিজেনশর্মা
Ref: (Daily Samakal, Date: 15 June 2013 Page : 23)