ঝিনাইগাতীতে হাতির তাণ্ডব


26 April, 2016.

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি:

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় গারো পাহাড়ের ঢালে দুটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে প্রতি রাতেই তাণ্ডব চালাচ্ছে বন্য হাতির পাল। খাবারের সন্ধানে এরা লোকালয়ে হানা দিয়ে নষ্ট করছে ফসলি জমি। গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বসতঘর ও গাছপালা। ২ এপ্রিল কাংশা ইউনিয়নের নকশী গারোপাড়ায় হাতির আক্রমণে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পাহাড়ের ঢালে ১ হাজার ৮০০ পরিবারের প্রায় আট হাজার লোক হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসন ও কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ২ এপ্রিল সকালে ৩০-৪০টি হাতি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের লোকালয়ে নেমে আসে। সকাল আটটার দিকে নকশী গ্রামে হাতির আক্রমণে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপর থেকে প্রতি রাতে বন্য হাতির পাল উপজেলার কাংশা ও নলকুড়া ইউনিয়নের তাওয়াকুচা, পানবর, গরুচরণ দুধনই, বাকাকুড়া, গান্দিগাঁও, হালচাটি, নকশী, রাংটিয়া, সন্ধ্যাকুড়া, গোমড়া, হলদীগ্রাম ও গজনী গ্রামে হানা দেয়। হাতির পাল গ্রামে ঢুকে বোরো ফসল খেয়ে নষ্ট করা ছাড়াও বসতবাড়ি, গাছপালা ভেঙে ফেলছে। গত এক সপ্তাহে হাতির পাল সাতটি বসতঘর ভেঙে ফেলেছে এবং প্রায় ৩০ একর জমির ধান নষ্ট করেছে। ৪ এপ্রিল সরেজমিনে কাংশা ইউনিয়নের নওকুচি গারোপাড়ার কয়েকজন আদিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫-১৬ বছর ধরে প্রতিবছর ধান ও কাঁঠাল পাকার সময় তাঁরা হাতি- আতঙ্কে থাকেন। এ সময় হাতির পাল পাহাড় থেকে লোকালয়ে হানা দেয়। এ পর্যন্ত হাতির আক্রমণে উপজেলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক লোক। জীবন বাঁচাতে তাঁরা প্রতি রাতে দল বেঁধে মশাল জ্বালিয়ে পাহারা বসাচ্ছেন। গারোপাড়ার লতিরং মারাক বলেন, ‘কী করমু, মামাগর (হাতি) ভয়ে থাহি, কহন জানি আইসা পড়ে। তাই সবাই মিইলা সন্ধ্যার পর মশাল লইয়া পাহারা দেই। আমগর গেরামের সবায় ভয়ের মধ্যে আছি। মশাল জ্বালাইতে সরকারিভাবে তেলের ব্যবস্থা করলে আমরা কিছুটা রক্ষা পাইতাম। সবাই রাইত জাগুনের ফলে দিনে কামকাইজও করবার পায় না।’ নওকুচি গ্রামের চপিনার্থ মারাক বলেন, ‘হাতির পাল দিনে গাজনীর জঙ্গলে থাহে। সইন্ধ্যা নামুনের লগে লগে গাছপালা মটমট কইরা ভাঙতে ভাঙতে গেরামে ঢুইকা পড়ে। শব্দ পাইয়া মশাল জ্বালাই, হইচই করি, ঢাকঢোল পিডাই, তাও হাতি সরে না। আমরা ভয়ে সারা রাইত জাইগা থাহি। আলো দেখলে হাতি কিছুডা ভয় পায়। সরকারিভাবে পাহাড়ি গ্রামে যদি পল্লী বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হতো, তাইলে আমগর বিরাট উপকার অইত।’ কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, ‘প্রতি রাতেই হাতির পাল হানা দেয়। আমার ইউনিয়নে পাহাড়ের ঢালে এক হাজার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। হাতি তাড়াতে আমি নিজেও গিয়েছি। তবে সরকারিভাবে মশাল জ্বালাতে তেলের ব্যবস্থা হলে এলাকাবাসীর হাতি তাড়াতে সুবিধা হতো।’ নলকুড়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে প্রায় ৮০০ পরিবার হাতি-আতঙ্কে রয়েছে। বর্তমানে হাতির দলটি গজনী পাহাড়ে অবস্থান করছে। সন্ধ্যা হলেই লোকালয়ে হানা দেয়। সরকারি বা বেসরকারিভাবে জেনারেটরের মাধ্যমে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা হলে হাতি লোকালয়ে আসতে ভয় পেত। এ রকম আলোর ব্যবস্থা করা গেলে গ্রামের বাসিন্দাদের আর নির্ঘুমে রাত কাটাতে হতো না।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘হাতি-আতঙ্কে থাকা সীমান্তবর্তী প্রতিটি পরিবারকে অধিক আলো দিতে সক্ষম এমন বাতি (চার্জলাইট) দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আশা করছি, তা দ্রুত বিতরণ করা হবে। আপাতত মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়াতে তাঁদের কেরোসিন দেওয়া হবে।’

Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/840952

Photo Source: www.michaeljournal.org