সাথি ফসলে ভাগ্যবদল
26 April, 2016.
আনিসুর রহমান, গুরুদাসপুর (নাটোর):
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় রসুনের খেতে বাঙ্গি আর তরমুজ আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । রসুনের লাভ ছাড়াও বাড়তি এই আবাদ করে বিঘাপ্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন কৃষক। এলাকায় এটা সাথি ফসল হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১০ বছর ধরে অনেকটা বিনা খরচে লাভজনক হওয়ায় এই আবাদের প্রতি কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে। পলশুরা গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক আজিজ সরকার। নিজের জমি নেই। অন্যের তিন বিঘা জমি ইজারা (বর্গা) নিয়ে রসুন চাষ করেছেন। একই সঙ্গে করেছেন বাঙ্গি চাষ। তাঁর ভাষ্যমতে, এ বছর রসুনের ফলন ও দাম ভালো পেয়েছেন। রসুনের লাভ ছাড়াও তিন বিঘায় যে পরিমাণ বাঙ্গি হয়েছে, তা বিক্রি করে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা বাড়তি লাভ করবেন। স্থানীয় কৃষকেরা জানান,বাঙ্গি-তরমুজ চাষ করার জন্য আলাদা করে জমির দরকার হয় না। রসুন চাষের জমিতেই বীজ বপন করতে হয়। রসুন উঠে যাওয়ার পরই বাঙ্গি-তরমুজের গাছ ছড়িয়ে পড়ে খেতে। তখন সামান্য সেচ ও কীটনাশক দিলেই চলে। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বাঙ্গি-তরমুজ তুলতে শুরু করেন কৃষক। একদিকে রসুন ঘরে তোলা, অন্যদিকে বাঙ্গির খেত পাহারাসহ জমি থেকে এসব ফসল ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে গুরুদাসপুরের কৃষক ও কৃষকবধূরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রকৃতির উত্তাপে বাঙ্গি আর তরমুজ দ্রুত পেকে যায়। তাই দ্রুত এসব ফসল বিপণনের উদ্যোগ নিতে হয়। ব্যস্ততার এ সময়ে কৃষক পরিবারের স্কুল-কলেজগামী ছেলেমেয়েও ফলন তোলা ও বিপণনে হাত লাগিয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার কাঁচা-পাকা সড়ক ও মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে পাইকারি বাঙ্গি বিক্রির মোকাম। বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পথে পথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাক নিয়ে এসব পাইকারি মোকাম ও কৃষকের খেত থেকে সরাসরি পাইকারি দরে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকার ও ফড়িয়ারা। যশোর থেকে আসা মাসুদ পারভেজ নামের একজন ব্যাপারী বলেন, গুণগত মান ও অপেক্ষাকৃত কম দামে বাঙ্গি পাওয়া যায় এখানে। প্রতিদিন গড়ে দুই ট্রাক বাঙ্গি আর তরমুজ কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন তিনি। আকারভেদে প্রতিটি বাঙ্গি ২০ থেকে ৩৫ টাকায় আর প্রতিটি তরমুজ ৬০ থেকে ৯০ টাকা দরে কেনেন বলে জানান মাসুদ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুরুদাসপুর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০টি ট্রাক তরমুজ-বাঙ্গি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। প্রতিটি ট্রাকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার পিস বাঙ্গি লোড করা সম্ভব হয়। এতে ট্রাকপ্রতি প্রায় ৯০ থেকে ১ লাখ টাকার বাঙ্গি নিয়ে যান ব্যাপারীরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, গুরুদাসপুরের কৃষি এবং কৃষকের জন্য সাথি ফসল বাঙ্গি-তরমুজ এক আশীর্বাদ। এই আশীর্বাদই কৃষককে আর্থিকভাবে বদলে দিচ্ছে। অনেকটা বিনা খরচে একই জমিতে বাড়তি আবাদে কৃষকের ভাগ্যবদল শুরু হয়েছে। আগামী দিনে ব্যাপকভাবে তরমুজ-বাঙ্গি চাষ শুরু হবে বলে তিনি মনে করেন। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুরে এ বছর সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বিনা চাষে রসুনের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ৩ হাজার ২০০ বিঘা বাঙ্গি আর ৩ হাজার ৯০০ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তা ছাড়া, এসব জমির আলে ধনিয়া ১৮৫ বিঘা, মেথি ১৫০ বিঘা, কালোজিরা ১৮৫ বিঘা ও মরিচ ১২৫ বিঘা আবাদ হয়।
Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/840820
Photo Source: bonnieplants.com