হেমন্তের স্পর্শে বৃক্ষ

Tree

হেমন্তের স্পর্শ পেতেই গাছের পাতায় যেনো নববধূর গালে হলুদ ছোঁয়া। তরুণীর লাজে রাঙ্গা গালের রঙে রাঙ্গিয়ে উঠে গাছের পাতা তথা শীত প্রধান দেশের সারা বন। হলুদ, লালে ছেয়ে যায় ম্যাপল, ওক, বিচ, চেস্ট নাট আরও এমন নানান প্রজাতির গাছের পাতা। এসময় শুধু পাইন গাছ থাকে নিজের মত, তার এত আবেগ কোথায়?
বিষয়টি আসলে হেমন্ত আসার পূর্বেই প্রকৃতির মাঝে এক পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। বিশেষ করে গাছের মাঝে এক রকম প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় আর একে বলা হয় dormancy বা সুপ্তাবস্থা অথবা ঘুমন্ত অবস্থা। দীর্ঘ একটা সময় পরে স্ট্রেস কাটিয়ে গাছ শীতের সময়টিতে শীতনিদ্রা বা বিশ্রামে যায়। আর এর প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয় হেমন্তে। এ সময়ে পাতায় ক্লোরোফিলের অভাবে লাল, হলুদ রঙ ধারণ করে।
ডর্মেনসি প্রাণী বা গাছের ক্ষেত্রে এক রকম অবচেতনা বা ঘুমন্ত অবস্থা, এসময়ে গাছ খাদ্য তৈরী থেকে বিরত থাকে l বৃদ্ধি রোধ করে নাজুক কোষে শক্তি সঞ্চয় করে, তুষারপাত অথবা প্রচন্ড শীতের বিপক্ষে টিকে থাকার অথবা মাটিতে পানি স্বল্পতার মাঝেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটি প্রক্রিয়ার মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে।। এটা অনেকটাই বায়োলজিক্যাল ক্লক এর মত যা গাছকে বুঝিয়ে দেয় কখন তাকে বৃদ্ধি রোধ করে সুপ্তাবস্থায় নিজেকে রক্ষা করে আবার বসন্তে জেগে উঠতে হবে।
রাসায়নিক সাপ্লিমেন্ট প্রয়োগে কাষ্ঠল বিশেষ গাছের সুপ্ত অবস্থা থেকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব। কিছু কাষ্ঠল গাছ যেমন আপেল, কিউয়ি, পেস, আঙ্গুর ইত্যাদি গাছের ডর্মেনসি সময় কালীন কোষ ক্ষতি গ্রস্থ হয় ফলে বাড ব্রেক/ কুঁড়ি বিনষ্ট হয়ে যায়। হাইড্রোজেন সায়ানামাইড স্টিমুলেট এ ক্ষেত্রে ভিশন কার্যকর। বিশেষ করে পেস ফলের গাছে এটা প্রমাণিত। হাইড্রোজেন সায়ানামাইডের প্রয়োগ গাছের কোষ বিভাজনে সহায়তা করে গাছকে ডর্মেন্ট অবস্থা থেকে জাগিয়ে তুলে।
শীতপ্রধান দেশে হেমন্ত শুরু হবার দুই সপ্তাহ পূর্বেই বাগানের গাছে সার প্রয়োগ বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন এটা অনেকটা গাছকে সংকেত প্রেরণ করে বোঝানো হয় তাকে শীতনিদ্রা প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। ঝোপ বিশেষ গাছ (গোলাপ) এই সময়ে মোটেও ছাঁটা উচিৎ নয়, শীতনিদ্রার জন্য গাছের শক্তি বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। গাছের জন্য ডর্মেন্ট অবস্থায় খুব স্বল্প পরিমানে পানির প্রয়োজন হলেও শুষ্ক আবহাওয়ায় একেবারে পানিশুন্য হয়ে না পরে তাই গাছের গোড়ার ময়েশ্চারাইজার নিরীক্ষণে রাখা আবশ্যক এবং প্রয়োজনে সপ্তাহ অন্তর স্বল্প পরিমানে পানি গাছের গোড়ায় দিতে হবে।