ফুল পরিচিতি
উদ্ভিদ জগত এত’ই বিচিত্র যে এদের সব প্রজাতি, বাসস্থান ও স্বভাব নিয়ে যেমন আলোচনা করে শেষ করা সম্ভব নয় তেমনি সব উদ্ভিদের পরিচিতি জানাও খুব সহজ কাজ নয়। শুধু কি তাই উদ্ভিদ যেহেতু কথা বলতে পারে না সুতরাং এদের শারীরিক ভাষা দেখেই বুঝে নিতে হয় সে কি পছন্দ করছে বা কি করছে না। আমার ভাবনার কথা বলছি, উদ্ভিদকে দিয়ে যদি তার মনের কথাগুলো কোন প্ররোচনায় কাগজ কলমের মধ্য দিয়ে লিপিবদ্ধ করে নিতে পারতাম তাহলে হয়ত বুঝতে পারতাম তার আকুতি তার চাওয়া পাওয়া কিন্তু এই ভাবনা এখন জেগে স্বপ্ন দেখার মত। হয়ত ভবিষ্যতে এমন কোন এক সফটওয়্যার আবিষ্কার হবে ইসিজি যন্ত্রের মত গাছের ডালপালা অথবা লতা পাতায় লাগিয়ে দিলে তার চাওয়া পাওয়া সহ সব সমস্যা সাদা কাগজে প্রিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসবে।
•
বসন্তের শেষে কিছু ফুল ফুটে যাদেরকে রমনা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন,চন্দ্রিমা উদ্যান বা ঢাকা শহরের বিভিন্ন পার্কে দেখা যায়। আমরা অনেকেই এদেরকে নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ি বিশেষ করে বাংলা নামের নাগকেশর ও নাগেশ্বর কে একই উদ্ভিদ মনে করে থাকি। আবার কখনো কখনো নাগলিঙ্গমকে ভুল নামে পরিচয় দেই। এতে করে নতুন প্রজন্ম উদ্ভিদ গুলো সম্পর্কে একটা ভুল ধারনা নিয়ে বড় হচ্ছে। হয়ত সেদিন বেশী দূরে নয় ব্যাপারটি মধুমঞ্জুরী ও মাধবীলতার মত বিভ্রান্তির পর্যায়ে এসে দাঁড়াবে। কবি সাহিত্যিকরা যুগে যুগে অনেক গান রচনা করেছেন যদিও এসব গান রচনায় বিজ্ঞানের চেয়ে সাহিত্যের প্রাধান্য বেশী ছিল। তবে বিজ্ঞান আর সাহিত্য একটি গ্লাসে রেখে যদি একত্রে ঘোটা দেয়া যায় তাহলে যে মিশ্রণ তৈরি হবে তা আশা করি মন্দ লাগবে না।
“নাচেন ভালা সুন্দরী লো
বাঁধেন ভালা চুল
যেন হেলিয়া দুলিয়া পড়ে
নাগকেশরের ফুল।”
আসলে লেখাটি কবি কাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন তা বলতে পারবো না কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা যায় কবি নাগকেশরের রূপে মুগ্ধ হয়েই এই গান তার কোন এক প্রিয় মানুষটিকে উদ্দেশ্য করে রচনা করেছিলেন, যাই হোক সাহিত্যের এই দিকটায় আমরা না হয় নাই গেলাম।
•
নাগকেশর এটি পেরিনিয়াল চিরসবুজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। আমাদের দেশে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশী দেখা যায়। এটি মাঝারি আকারের বৃক্ষ। ফুলের রঙ মিল্ক হোয়াইট
(দুধের মত সাদা)। বেন্থাম হুকার প্রদত্ত উদ্ভিদত্বাত্তিক শ্রেণীবিন্যাসে আমরা যা দেখতে পাই তা নিন্মরূপঃ
রাজ্য: Plantae
(অবিন্যস্ত): Angiosperms
(অবিন্যস্ত): Eudicots
(অবিন্যস্ত): Rosids
বর্গ: Malpighiales
পরিবার: Calophyllaceae
গন: Ochrocarpos
প্রজাতি: O. longifolius
বৈজ্ঞানিক নাম: Ochrocarpos longifolius
Benth. & Hook.f. ex T.Anderson
এই ফুলের পুং ও স্ত্রী কেশর তুলনা মূলক ভাবে নাগেশ্বরের চেয়ে ছোট এবং ফুলের আকারেও অনেক ছোট।
•
নাগেশ্বর এটিও পেরিনিয়াল সপুষ্পক উদ্ভিদ বসন্তের শুরুতে এর কচি পাতায় দুধে আলতা মিশানো রঙে যে কোন মানুষ মুগ্ধ হবেন। এরাও মাঝারি আকারের বৃক্ষ। নাগকেশর ও নাগেশ্বর একই বর্গ ও পরিবার (যথাক্রমে Malpighiales ও Calophyllaceae) ভুক্ত উদ্ভিদ। তবে নাগেশ্বর অন্য গন ভুক্ত যেমন Mesua গনের উদ্ভিদ। যার বৈজ্ঞানিক নাম Mesua ferrea L. এদের ফুলের পুং কেশর ও স্ত্রী কেশরের সংখ্যা নাগকেশরের চেয়ে অনেক বেশী এবং ফুলের আকারও অনেক বড়। দেখতে অনেকটা ডিম পোঁচের মত। কার্ল লিনিয়াস প্রদত্ত উদ্ভিদত্বাত্তিক শ্রেণীবিন্যাসে আমরা যা দেখতে পাই তা নিন্মরূপঃ
রাজ্য: Plantae
(অবিন্যস্ত): Angiosperms
(অবিন্যস্ত): Eudicots
(অবিন্যস্ত): Rosids
বর্গ: Malpighiales
পরিবার: Calophyllaceae
গন: Mesua
প্রজাতি: M. ferrea
বৈজ্ঞানিক নাম:Mesua ferrea L.
•
নাগলিঙ্গম এটি বিশালাকৃতির বৃক্ষ যার কাণ্ড সোজা হয়ে ৪০-৫০ ফিট পর্যন্ত উঁচু হয়। কাণ্ডের বেসাল ক্যানোপিও উপরে বর্ণিত অন্য দু’টি উদ্ভিদের তুলনায় অনেক বেশী। কিন্তু অন্য দুটি(নাগকেশর ও নাগেশ্বর) উদ্ভিদের কাণ্ড নাগলিঙ্গমের মত সোজা হয় না। নাগলিঙ্গমের ফুল ও ফলের আকার অনেক বড়। ফলের আকারের উপর নির্ভর করেই এই উদ্ভিদের ইংরেজি নাম হয়েছে ক্যানন বল ট্রি বা এলিফেন্ট বল। এই বৃক্ষ অন্য দুটি উদ্ভিদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও পরিবারও সম্পূর্ণ আলাদা। French pharmacist, botanist Jean Baptiste Christophore Fusee Aublet(November 4, 1720–May 6, 1778) প্রদত্ত উদ্ভিদত্বাত্তিক শ্রেণীবিন্যাসে আমরা যা দেখতে পাই তা নিন্মরূপঃ
রাজ্য: Plantae
(অবিন্যস্ত): Angiosperms
(অবিন্যস্ত): Eudicots
(অবিন্যস্ত): Asterids
বর্গ: Ericales
পরিবার: Lecythidaceae
গন: Couroupita
প্রজাতি: C. guianensis
বৈজ্ঞানিক নাম:Couroupita guianensis Aubl.
এতক্ষণের আলোচনায় দেখা গেলো নাগকেশর ও নাগেশ্বর একই পরিবারভুক্ত হলেও আলাদা গন ভুক্ত উদ্ভিদ এবং নাগলিঙ্গম সম্পূর্ণ আলাদা পরিবার ও গন ভুক্ত উদ্ভিদ। সুতরাং এই উদ্ভিদ তিনটির ভিন্ন সত্ত্বা এতে কোন সন্দেহের অবকাশ রইলো না।
ছবির বিষয়বস্তু:
(১)নাগকেশর(গুগলের সৌজন্যে)
(২)নাগেশ্বর(গুগলের সৌজন্যে)
(৩)নাগলিঙ্গম(Swapan Ghosh)