ঢাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে


01 May, 2016.

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একদিকে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে কুকুর নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পশুটির উপদ্রব বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আক্রমণের শিকার মানুষের সংখ্যা। জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে গত বছর ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে ৬৬ হাজার ২০৪ জন জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সেবা নিয়েছেন। তিন বছরের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। এর মধ্যে শুধু গত ডিসেম্বরেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জনকে কুকুর কামড় দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছর কুকুরের কামড় খাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৪২ শতাংশই শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। রেবিস ইন এশিয়া ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশ থেকে স্থায়ীভাবে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে ২০১১ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির আওতায় চারটি কর্মকৌশল নির্ধারণ করে। এগুলো হচ্ছে জলাতঙ্ক রোগ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম জোরদার করা। কুকুরের কামড়ের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। ব্যাপক হারে কুকুরের শরীরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকাদান এবং লাইগেশন ও খোজাকরণের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। এর মধ্যে ২০১২ সালে উচ্চ আদালত কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ঢাকায় এ মুহূর্তে দেড় লাখের বেশি বেওয়ারিশ কুকুর আছে। একটি মাদি কুকুর বছরে আটটি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করে। তিন বছর কুকুর মারা বন্ধ থাকায় কুকুরের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা। আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরপরই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অভয়ারণ্য নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার চুক্তি করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংস্থাটি ১০ হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করেছে অথবা টিকা দিয়েছে। চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে অভয়ারণ্য ও হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনালের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সমঝোতা স্মারকে ডিএনসিসির পক্ষে মেয়র আনিসুল হক এবং অভয়ারণ্যের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রুবাইয়া আহমেদ স্বাক্ষর করেন। সমঝোতা স্মারকের আওতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ডিএনসিসি এলাকার চার হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ ইনজেকশন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কুকুরের সংখ্যা গণনা ও কুকুরের সংখ্যা ব্যবস্থাপনা বিষয়েও কাজ করবে। আর এ-সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করবে হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল। চিকিৎসকেরা বলেন, কুকুর কামড় বা আঁচড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পানি ও কাপড় কাচা সাবান দিয়ে ভালোভাবে ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাঁরা আরও বলেন, জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর ক্ষতস্থানে ব্যথা হবে ও ঝিমঝিম করবে, জ্বরজ্বর লাগবে, পানি দেখলে বা পানি খেতে ভয় লাগবে। বাতাস ও আলো সহ্য হবে না। শ্বাসকষ্ট হবে এবং শেষ পর্যায়ে শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং মারা যাবে।

Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/846181

Photo Source: www.hsi.org