Black kite
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগঃ-
Scientific Classification
রাজ্য / Kingdom: |
Animalia |
বর্গ / Order: |
Accipitriformes |
পরিবার / Family: |
Accipitridae |
গন / Genus: |
Milvus |
প্রজাতি / Species: |
M. migrans |
Black Kite
বাংলা নামঃ |
ভুবন চিল
|
English Name: |
Black kite |
Scientific Name: |
Milvus migrans |
DescriptionDistributionReport Us
ভুবন চিল (Black Kite) প্রাণী জগতের Chordata(কর্ডাটা) পর্বের Aves(এভিস) শ্রেণীর Accipititridae(অ্যাক্সিপিট্রিডি) গোত্রের অন্তর্গত Milvus(মিলভাস) গণের এক প্রজাতির মাঝারি আকারের শিকারী পাখি। এই প্রজাতিটি গোদা চিল, বাদামী চিল, ডোম চিল নামেও পরিচিত। ভুবন চিলের বৈজ্ঞানিক নাম Milvus migrans (যার অর্থ পরিজায়ী চিল; গ্রিক Milvus = চিল, migrans = পরিযায়ন)। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় এই পাখিটির জন্য পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। যেমনঃ সাঁওতালি ভাষায় এর নাম কুরিত, সিংহলিতে রাজালিয়া, অসমীয়ায় চিলানা ও মুগাচারানি; সিন্ধিতে নাম সিরিউন।
বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে এই প্রজাতির মোট সংখ্যা ১০-৬০ লক্ষ; যা আপাতত সন্তোষজনক। এই কারণে আইইউসিএন এর রেড লিস্টে ভুবন চিল ন্যূনতম বিপদ্গ্রস্ত অথবা Least Concern (LC) হিসেবে স্থান পেয়েছে।
ভুবন চিল লম্বা চেরা লেজওয়ালা কালচে-বাদামি মাঝারি আকারের শিকারী পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৬১ সেন্টিমিটার, ডানা ৪৩.৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৩.৬ সেন্টিমিটার, পা ৫.২ সেন্টিমিটার ও লেজ ২৬.৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ চিলের ওজন ৬৩০-৯৩০ গ্রাম এবং স্ত্রী পাখির ওজন ৭৫০-৯৪০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। তবে স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির তুলনায় একটু বড় হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ স্পষ্ট গাঢ় লালচে-বাদামি। পিঠ কালচে লাল-বাদামি। ডানার উপরের অংশের মধ্য-ঢাকনি বরাবর ফিকে বাদামি রঙের ফিতা থাকে। ওড়ার সময় এর ডানার নিচের সাদা প্রাথমিক পালকগুলো স্পষ্ট নজরে পড়ে। ঠোঁট স্লেট-কালো। চোখ বাদামি; এবং পা ও পায়ের পাতা ফিকে হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও পেটে প্রশস্ত সাদাটে কিংবা পীতাভ ডোরা থাকে। গায়ে অনিয়মিত ফিকে তিলা দেখা যায়। তখন দূর থেকে এদের হালকা বাদামি দেখায়। উপপ্রজাতিভেদে ভুবন চিলের চেহারায় বিভিন্নতা দেখা যায়।
ভুবন চিল সুযোগসন্ধানী খাদক। এর খাদ্যতালিকা বেশ বিশাল। এর খাদ্যতালিকা স্থানীয় খাদ্যের যোগানের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পানির আশেপাশে আবাস হলে মাছই এদের প্রধান শিকার হয়। অনেকসময় এরা মৃত বা রুগ্ন মাছও খায়। আহত, মৃত বা অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি, স্তন্যপায়ী, ব্যাঙ, সরিসৃপ ও পোকামাকড়ও খায়। গ্রামে প্রায়ই এদের হাঁস-মুরগির ছানা ছিনতাই করতে দেখা যায়। বর্জ্যভূক পাখি হিসেবে কসাইখানা, বর্জ্য-স্তুপ, মাছবাজার ও পোতাশ্রয়ে ওরা উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য খায়। প্রায়ই উচ্ছিষ্ট বা পশুর মৃতদেহ খায়।
খাদ্যের সন্ধানে এরা আকাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস ভঙ্গিমায় চক্কর কেটে বেড়ায়। এরা খুব কমই ডানা ঝাপটায়। ডানার তুলনায় শরীর হালকা হওয়ায় এরা অনেক্ষণ ডানা না ঝাপটে ভেসে বেড়াতে পারে। নৌকার হালের মতো লেজ ব্যবহার করে ঝটপট দিক বদল করতে পারে। উড়তে পারে বাতাসের প্রতিকূলেও। খাদ্যের সন্ধান পেলে এরা ডানা গুটিয়ে ফেলে ও ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে।
মার্চ থেকে মে ভুবন চিলের প্রধান প্রজনন ঋতু। এ সময় পুরুষ চিল আকাশে চক্রাকারে উড়তে থাকে এবং হঠাৎ ঝাঁপ দিয়ে ডালে বসে থাকা স্ত্রী চিলের পিঠে এসে নামে। স্থানভেদে প্রজনন মৌসুমে বিভিন্নতা দেখা যায়। উঁচু গাছে কাঠি, ডালপালা ও কাঠি দিয়ে এলোমেলো মাচার মত বাসা বানায়। উঁচু দালানে পানির ট্যাঙ্কেও বাসা করতে পারে। বাসায় নষ্ট কাগজ, পাখির পালক, ছেঁড়া কাপড়, শুকনো গোবর, কাদা, উজ্জ্বল প্লাস্টিকের বস্তুও থাকে। বাসার উচ্চতা ভূমি থেকে ৫ মিটার থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়। বাসা বানানো হয়ে গেলে ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ পাটল-সাদা। ডিমের মাপ ৫.৩ × ৪.৩ সেন্টিমিটার। ৩০ থেকে ৩৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ছানারা প্রায় দুই মাস বাসায় থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় চিলই বাসা বানায়, ডিমে তা দেয় ও সন্তান লালন-পালনের ভার নেয়। দুই বছর বয়সে ছানারা প্রজননক্ষম হয়।
(Sakib Chowdhury Abir)
তথ্যসূত্রঃ
(১) উইকিপিডিয়া
(২) রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ১৮৯-১৯০
(৩) বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ২৩৩।
দুই মেরু আর দুই আমেরিকা মহাদেশ বাদে প্রায় পুরো পৃথিবী জুড়ে এদের বিস্তৃতি। খোলা বিস্তীর্ন এলাকা ভুবন চিলের প্রিয় এলাকা। এছাড়া ঘন বন, পাতলা বন, পার্বত্য অঞ্চল, নদীর পাড়, বেলাভূমি, বন প্রান্ত, ঘাসবন, সাভানা প্রভৃতি অঞ্চলে দেখা যায়। এছাড়া বড় বড় বন্দর, শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলেও দেখা যায়।