উদ্ভিদের অস্ত্র গোলাবারুদ ও আত্মরক্ষার কৌশল

বাবলা

বাবলা

মানুষ নিজেকে শত্রু থেকে রক্ষার জন্য কত রকমের প্রোটেকশন নেয়। এই ধরুন কোন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির জন্য তিন চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়। রাস্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বর্গের নিরাপত্তার জন্য কয়েকটা বাহিনী নিযুক্ত থাকে রাস্তায় বেরুবার আগে থেকেই এইসব বাহিনীর লোকজন রাস্তার নিরাপত্তা বিধান করে থাকেন। বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করেন। আবার বিশেষ বিশেষ দিনের জন্য প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কুকুরকে ব্যবহার করা হয় কারন কুকুরের ঘ্রান শক্তি খুবই প্রখর এরা ঘ্রাণ নিয়ে বলে দিতে পারে কোনো এক্সপ্লোসিভের উপস্থিতিতি। আর আমরা যারা সাধারন মানুষ আছি তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অনুমদিত পিস্তল বন্দুক চাকু ছুরি ব্যবহার করি(যদিও কেউ কেউ অনুমোদন ছাড়াই ব্যবহার করেন)যাদের সামর্থ নেই তারা আর কিছু না হলেও একটা বাঁশের লাঠি ও সাথে দু একজন সুঠাম দেহী দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করি। কিন্তু যে উদ্ভিদের উপর মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে নির্ভরশীল সেই উদ্ভিদ কিভাবে তাদের নিরাপত্তা বিধান করে প্রকৃতিতে টিকে আছে এ নিয়েই আজ কিছুক্ষন ঘ্যান ঘ্যান করে আপনাদের বিরক্ত করবো। সুধী পাঠক আশা করছি আপনারা আমার সাথে থাকবেন।

সাধারনতঃ জীবজন্তুরা উদ্ভিদের মূল,কান্ড,পাতা ইত্যাদি ভক্ষন করে জীবন ধারন করার জন্য উহাদের আক্রমন করে। সংগত কারনেই আত্মরক্ষার জন্য উদ্ভিদেরাও বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করে।

বেশ কিছু উদ্ভিদ কাক্ষিক শাখা অথবা মুকুলের(Axillary branches or buds) বৃদ্বি রহিত করে শাখাকন্টকে(Throns)রূপান্তরিত হয় যাহা শক্ত অগ্রভাগ সুচের ন্যায়,বহির্জনিঞ্চু(Exogenous)।
কোন পানী এদের কাটার জন্য সহসা আক্রমন করতে পারেনা। যেমন মেহেদী (Lawsonia),
ময়নাকাঁটা (Vangueeia), বাগানবিলাশ (Bougainvillea) ইত্যাদি।

পাতা অথবা পাতার অংশ পত্রকন্টকে (Spines) পরিনত হতে দেখা যায় যাহা সুচের মত সরু ও ধারালো। যেমন ফনিমনসা,বাবলা (Acacia arabica), লেবু (Lemon), আনারস (Pineapple)
ইত্যাদি। তৃণ ভোজী পশু কখনই এদের আক্রমন করে না।

উদ্ভিদ পাতায় বা ফলের উপর এমন কিছু দংশরোম (Stinging hairs) উৎপন্ন করে যাতে ফরমিক এসিড থাকে যখনই কোন জীব জন্তু এদের সংস্পর্শে আসে তখন ইহার আগা ভাংগিয়া ফরমিক এসিড দেহের মধ্যে প্রবেশ করে ও জ্বালা যন্ত্রনা অনুভব হয়। এবার ভাবুন মানুষ ও প্রানী কেউ কি এই উদ্ভিদের সংস্পর্শে যাবে? এই বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ গুলো হলো আলকুশি ফল (Mucuna), বিছুটির পাতা (Tragia) ইত্যাদি।

কিছু কিছু উদ্ভিদ আরো উন্নত ম্যকানিজমে শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে যেমন ভেরেন্ডা জাতিয় উদ্ভিদ, Jatropha sp, চিতা (Plumbago) প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা কান্ড ও ফলের উপর গ্রন্থিরোম তৈরী করে যা হতে এক প্রকার আঠালো পদার্থ নির্গত হয় যখন কোন প্রানী এদেরকে খেতে যায় তখনই এদের মুখে আঠালো পদার্থটি লেগে যায় ফলে সহজে এদের দ্রবীভূত করতে পারেনা। এবার বলুন ২য় বার কোন প্রানী এইসব উদ্ভিদের ছায়া মাড়বে(!)

সুধী পাঠক এছাড়াও আরো বিশেষ কিছু কলা কৌশলের সাহায্যে উদ্ভিদ নিজেদের রক্ষা করে। যেমন ধরুন নিম, আদা, হলুদ এসব উদ্ভিদ আপনারা যাঁরা চাষ করেছেন কখনো কি এদের বেস্টনি দিয়ে
প্রটেকশন দিয়েছেন? কখনোই না, তার কারন হলো এইসব উদ্ভিদে বিশেষ ধরনের উপক্ষার বিদ্যমান যা অসম্ভব তিতো বা ঝাঝালো এটাই হলো এদের অস্ত্র ঢাল তলোয়ার যাই বলেন।

কিছু উদ্ভিদের গন্ধ এমন হয় যে জীবজন্তু এদের আশে পাশেই যায় না যেমন তুলসী, ল্যান্টানা ইত্যাদি। তামাক, ধুতরা এসব উদ্ভিদ কখনই আক্রমনের শিকার হয় না কারন এদের দেহে সঞ্চিত থাকে বিষাক্ত উপক্ষার। কচু মানকচু বা কচু জাতিয় কোন উদ্ভিদকে ভক্ষণ করার জন্য কোন প্রানী আক্রমন করতে দেখেছেন? কখনই না কারন হলো এদের দেহে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ থাকে ফলে ভক্ষণ করার পর মুখ গহব্বরে ভীষণ জ্বালা অনুভুত হয়, চুলকানো হয় এমনকি মুখ গহব্বর লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। এছাড়া কিছু উদ্ভিদ তৃণ ভোজী প্রানীদের উপস্থিতি টের পেলেই এলিলো কেমিক্যাল নিঃসরন করে যা কোন ক্রমেই প্রাণীরা সহ্য করতে পারে না।

প্রকৃতিতে এমন কিছু উদ্ভিদ আছে যাদের আকার আকৃতি সাপ বা অন্য কোন ভয়ংকর প্রানীর মত যা দেখলে আপনিও ভয় পেয়ে যাবেন, তৃণভোজী প্রাণীরা এই সব উদ্ভিদের আশে পাশেও যায় না।

সুধী পাঠক একটা বাস্তব গল্প বলে শেষ করছি,গত বছর দার্জিলিং এর স্টোন ফরেস্টে ইকুইজিটাম
(Pteridophyta) খুঁজতে যেয়ে Arisaema (এক প্রকার কচু জাতীয় উদ্ভিদ) এর ফুল দেখে আমাদের ভ্রমন সঙ্গী জোড়ে চিৎকার করছিলো আমি নিজেও ভয় পেয়েছিলাম কারন এর ফুল হঠাৎ দেখলে মনে হবে গোখরা সাপ ফণা তুলে আপনার দিকে হা করে আছে(!) যা হোক স্থানীয় একজন আমাদের ভুল ভাংগিয়েছিলো।