উদ্ভিদ দেহে ক্যান্সার সৃষ্টিতে লিফ গলের ভূমিকা
বিজ্ঞানীরা ক্যান্সারকে জয় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কতক সমাধান হয়েছে আর কতক এখনো তিমিরেই আছে। ক্যান্সার শব্দটি শুধু মাত্র মানব জাতির জন্যই প্রযোজ্য নয়। যাদের উপর আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নির্ভরশীল সেই উদ্ভিদেরও ক্যান্সার হয় কিন্তু আমরা তার খোঁজ রাখি না।
কিছু কিছু উদ্ভিদের পাতায় কালো বা সবুজ রঙের ছোট ছোট মটরশুঁটি আকারের বা তার চেয়ে একটু বড় দানার মত দেখতে পাওয়া যায় যা সাধারণত Leaf Gall নামে পরিচিত। এই গল তৈরির খলনায়ক হিসেবে কাজ করে এক প্রকার ক্ষুদ্রাকৃতির Wasp. যদি আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয় তবে উদ্ভিদের ডালপালা বা কাণ্ডে সৃষ্ট গলের কারণে যে ক্ষত তৈরি হয় এর জন্য প্রধান ভূমিকা পালনকারী পোকারা হল Callirhytis cornigera ও C. quercuspunctata এদের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত স্থানের টিস্যু গুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। সেখানে উৎপন্ন নরম টিস্যু খাবার জন্য পোকামাকড় ও পিঁপড়ার আক্রমণ ঘটে এবং সামান্য বাতাসে হঠাৎ বড় বড় ডালপালা ভেঙ্গে যায়। এক পর্যায়ে উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটে।
যদি একটু সহজ করে বলি Gall হল উদ্ভিদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা উদ্ভিদ টিস্যুর গঠন আকৃতি ফোলে যাওয়া কে বুঝায়। যে সকল পোকা গল তৈরি করে এদের জীবনচক্র খুবই পরিবর্তনশীল ও বিচিত্র। একটি উদ্ভিদের কাষ্ঠল অংশ বা ডালপালায় গল পরিপক্ব হতে প্রায় ২ বছর সময় লাগে। Gall উৎপন্ন কারি wasps গুলো সাধারণত হোস্ট উদ্ভিদে শীতের সময় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। বসন্তে যখন গাছের নতুন কুঁড়ি ও পাতা গজায় তখন ছোট ছোট wasps গুলি কচি পাতা ও কুঁড়িতে তাদের ডিম দিতে শুরু করে।
ডিম দেয়ার সময় ও লার্ভা অবস্থায় wasps গুলি এদের শরীরে অবস্থিত বিশেষ ধরনের গ্লান্ড থেকে growth-regulating ক্যামিকেল (2,4-dichloro-phenoxyacetic acid) নিঃসরণ করে যা উক্ত উদ্ভিদে প্রাপ্ত ক্যামিকেল ও ফাইটোহরমোনের সাথে পারস্পরিক বিক্রিয়া সংঘটিত করে ও উদ্ভিদ টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়। একটা লম্বা সময় ধরে উদ্ভিদ কোষের বৃদ্ধি ঘটার পর একসময় গলের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয় ততক্ষণে উদ্ভিদ কোষের যেটুকু সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে যায়। আগেই উল্লেখ করেছি তখন পোকা মাকড় আক্রান্ত অংশটিকে এদের বাসস্থান হিসেবে নির্বাচন করে নেয় ও খাদ্য হিসেবে গল টিস্যু খেয়ে জীবন ধারণ করে। ফলে আক্রান্ত স্থান থেকে শুরু করে পরের অংশে উদ্ভিদের মূলরোম দিয়ে আহরিত পুষ্টি সঠিক ভাবে সরবরাহ করতে পারে না।
আমাদের দেশে আম ও জাম সহ বিভিন্ন ফলজ উদ্ভিদের পাতায় প্রচুর পরিমাণে গল সৃষ্টি হতে দেখা যায়।গাছের পরিচর্যা সঠিক থাকা স্বত্বেও আমের ফলনে বিপর্যয় নেমে আসে। তার একমাত্র কারণ হল পাতায় সৃষ্ট গলের কারণে সঠিক ভাবে সালোকসংশ্লেষণ করতে না পারায় উদ্ভিদ তার চাহিদা মত নিজের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেনা ফলে মুকুল উৎপাদনে Florigen হরমোনের প্রোডাকশন কমে যেয়ে মুকুল উৎপাদন কম হয় যথারীতি ফলনও কম হয় কিন্তু পরিচর্যা কারি কৃষক বেচারার মাথায় হাত।
যখন একবার গলের বৃদ্ধি শুরু হয় তখন এদের প্রতিকার করা খুবই কঠিন হয়ে যায়। তবে বাজারে প্রতিষেধক হিসেবে প্রাপ্ত কিছু ইনসেকক্টিসাইড পাওয়া যায় যা প্রয়োগ করে প্রাথমিক অবস্থায় গল দমন করা সম্ভব।
সতর্কতা:
সকল Pesticide হল বিষাক্ত। যদি কেউ Pesticide ব্যবহার করেন তবে বোতলের গায়ে লেখা নির্দেশনা মেনে চলুন। শিশু, পোষা প্রাণী ও গবাদিপশুর নাগালের বাইরে রাখুন। ব্যবহারের পর খালী বোতল যথাযথ নিয়মানুসারে সঠিক স্থানে রাখুন যেন কখনোই পুকুর, টিউবওয়েল, ডোবা ও জলাশয়ের সংস্পর্শে না আসে। অন্যথায় অনেক মূল্যবান প্রাণহানির সম্ভাবনা থেকে যাবে।
ছবিঃ গুগলের সৌজন্যে।