রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-২

লেখক- আজহারুল ইসলাম খান।

হয় নিদ্রা আসুক, না হয় এক্ষুনি অবসান হোক
এই অসহ্য রাত্রির। আমি আর সইতে পারছি না।
আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেছে নির্ঘুমতা।
এই রাত্রি এখন আমার সহ্যসীমার বাইরে।
দুঃখে-ক্ষোভে, অভিমানে আমার বুকের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস, যেন সমুদ্রের তলদেশ থেকে শূন্য হাতে উঠে আসা কোনো ব্যর্থ ডুবুরী।

সুধী পাঠক ঘুম নিয়ে লেখা নির্মলেন্দু গুণের কবিতা পাঠ করছিলাম শেষ হতেই মনে কিছু প্রশ্ন উকি দিল তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। সকল প্রানীর জন্য ঘুম অপরিহার্য কিন্তু উদ্ভিদ কি রাতে ঘুমায়? কি আবোলতাবল বকছি তাইনা? চলুন দেখি ঘটনাটা কি(!)

উঁচু বৃক্ষ

উঁচু বৃক্ষ

দিনের বেলা সালোকসংশ্লেষনের কারনে রক্ষিকোষের শ্বেতসার দ্রবনীয গ্লোকোজে পরিনত হয। তাই আশে পাশের কোষ হতে পানি শোষন করে রক্ষিকোষ(Guard cell)ফুলে ওঠে। তাই পত্ররন্ধ্র দিনে খোলা থাকে। কিন্তু রাতে সালোকসংশ্লেষ বন্ধ থাকে বলে পত্ররন্ধ্র বন্ধ থাকে। রাতে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরী করা বন্ধ রাখে। তাহলে উদ্ভিদ রাতে বিশ্রামে থাকে ও ঘুমায়।

রক্ষিকোষ(মাইক্রোস্কপিক ভিউ)

রক্ষিকোষ(মাইক্রোস্কপিক ভিউ)

ঢাকায় এখন অনেক আবাসিক ১০/১২ তলা বিশিস্ট এপার্টমেন্ট ভবন তৈরী হয়েছে। এইসব ভবনে যদি কখনো পানি উত্তোলনের পাম্প নস্ট হয় তাহলে যে কি বিড়ম্বনা পোহাতে হয় বোধকরি যাঁরা এই সমস্যার সম্মুখিন হয়েছেন শুধু তাঁরাই অনুধাবন করতে পেরেছেন। এই ব্যাপারটি দেখে মনে প্রশ্ন জাগার কথা এত শক্তিশালী পাম্প দিয়ে যে উচ্চতায় আমরা পানি উত্তোলন করি ঠিক একই উচ্চতার উদ্ভিদ কি করে তাদের অগ্রভাগে পানি পৌঁছে দেয় (!)

সুধী পাঠক আপনারা বিরক্ত বোধ করছেন না তো? গাছের পাতায় খাদ্য তৈরীর জন্য অপরিহার্য পানি বিশাল লম্বা গাছে কিভাবে অভিকর্ষ টানের বিপরীতে এত উচুতে উঠে?
উদ্ভিদ মূলরোম দিয়ে মাটির কনার ফাঁকে অবস্থিত পানি শোষণ করে। মূলরোমের কোষরস গাঢ় থাকায় অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় সহজেই কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পানি মূলরোমের অভ্যন্তরে প্রবেশের ফলে এর কোষরসের ব্যাপন চাপ ঘাটতি বা DPD কমে যায়। কিন্তু পার্শ্ববর্তী কোষের DPD তুলনামূলক বেশি থাকায় পানি পরবর্তী কোষে যায়। এভাবে কোষ হতে কোষান্তরের মধ্য দিয়ে পানি জাইলেম টিস্যুর ভেসেলে পৌঁছায়। জাইলেম টিস্যু মূল থেকে কান্ড ও তার শাখা-প্রশাখা হয়ে পাতা পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন, এমনকি শিরা উপশিরা হিসেবে পাতায় জাইলেম টিস্যু জালের মত পরিব্যপ্ত। ভেসেল ও ট্রাকিডের গহ্বরের মধ্যে পানি একটি অখন্ড স্তম্ভের ন্যায় কাজ করে যা মূল হতে পাতার শিরা উপশিরা পর্যন্ত বিস্তৃত। পানির অণুগুলোর মধ্যে Cohesion এবং পানির অণু ও ভেসেল বা ট্রাকিডের কোষপ্রাচীরের অণুর মধ্যে Adhesion force এর জন্য প্রস্বেদনের সময় স্তম্ভে পানির স্রোতে কোন ছেদ পড়ে না। প্রস্বেদনের সময় পাতার মেসোফিল টিস্যুর কোষ সমূহ হতে পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে কোষ রসের DPD বেড়ে যায়। কিন্তু পার্শ্ববর্তী কোষের DPD কম থাকায় পূর্ববর্তী কোষ হতে পানি এই কোষে চলে আসে। DPD এর সমতা রক্ষার জন্য কোষ হতে কোষান্তরে পানির গমনের ফলে শেষ পর্যন্ত পরিবহন টিস্যুর মধ্যস্থিত পানির ঐ স্তম্ভে টান পড়ে এবং স্তম্ভটি আস্তে আস্তে উপরে উঠে যায়। পানির অণুগুলোর মধ্যে Cohesion এর কারণে স্তম্ভে কোনও ছেদ পড়ে না। এই স্তম্ভ যে বায়ুচাপ সহ্য করতে পারে তা দিয়ে সর্বাধিক উঁচু উদ্ভিদ হতে আরো অনেক উঁচুতেও পানি উত্তোলন সম্ভব ।
ঝগড়াটে মানুষ কচু খেলে নাকি গলা চুলকায় এমন একটি কথার প্রচলন আছে। ঘটনাটি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারন কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট জাতীয় ধাতব কেলাস থাকে। খাওয়ার সময় কেলাস গলায় বিধে গেলে গলা চুলকায়।এখন কচু খাওয়ার পর যদি আপনি বেশী কথা বলেন বা ঝগড়া করেন তাহলে ধাতব কেলাস গুলো গলায় বিধতে সহজ হয়। এজন্যই এই কথাটি প্রচলিত। আর যেহেতু ধাতব কেলাস জৈব অম্লে দ্রবণীয়, তাই লেবু খেলে কুটকুট বা গলা চুলকানি বন্ধ হয়।
DPD–Diffusion Pressure Dificit.
Cohesion–The intermolecular attraction between like-molecules
Adhesion– Adhesion is the tendency of dissimilar particles or surfaces to cling to one another (cohesion refers to the tendency of similar or identical particles/surfaces to cling to one another). The forces that cause adhesion and cohesion can be divided into several types.

ছবি সংগ্রহঃ ইন্টারনেট।

রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-১

রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-৩

রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-৪