৩৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম বন্যার ধাক্কা ইউরোপে
6 June 2016. আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
হঠাত্ বৃষ্টির জেরে বন্যায় বিপর্যস্ত ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি জার্মানি ও ফ্রান্সে। ইউরোপে বন্যায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৩৫ বছরের মধ্যে ফ্রান্সে এত ভয়াবহ বন্যা কেউ দেখেনি। পানির তলায় প্যারিসসহ বেশ কিছু শহর। ফ্রান্স ও জার্মানির কয়েকটি শহরে নদীর পাড় ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে বসতি এলাকায়। থই থই রাস্তায় ইতস্তত ভাসছে আসবাবপত্র, গৃহস্থালির নানা জিনিস। হেলিকপ্টারে করে বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনেও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ফলে আরও বাড়তে পারে পানির স্তর। স্যেন নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ মিটার বেড়ে গিয়েছে। শিল্পসামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য গত শুক্রবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে পৃথিবীর সবচে বেশি দর্শনার্থীর পদভারে মুখর থাকা ল্যুভর মিউজিয়াম। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়া। জার্মানিতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বন্যায়। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে জিমবাখ আম ইন শহরে একটি বাড়িতে আটকে পড়া তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। কাছেই নদীতে ভেসে যাচ্ছিল এক মহিলার মৃতদেহ। ট্রিফটার্ন শহরে একটি স্কুলে মঙ্গলবার বিকেল থেকে আটকে ছিল প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী। পরে অবশ্য তাদের নিরাপদে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। জিমবাখ আম ইনে উদ্ধার করা হয় একটি স্কুলের প্রায় সাড়ে তিনশ’ শিক্ষার্থীকে। হঠাত্ এই প্রবল বৃষ্টির পিছনে রয়েছে অপ্রত্যাশিত একটি গভীর নিম্নচাপ যা গত কয়েক দিন ধরে মধ্য ইউরোপের উপরে অবস্থান করছে। আগামী কয়েক দিনেও পরিস্থিতি বদলানোর তেমন সম্ভাবনা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্যায় পুরো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে ফ্রান্স। এই বন্যা যে ধ্বংসযজ্ঞ রেখে যাচ্ছে তার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বছরখানেক লেগে যাবে। এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে সেন নদীর পানি। বন্ধ হয়ে গেছে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র। বন্যায় ভাসছে কয়েকটি শিল্পনগরী। আইফেল টাওয়ারসহ বহু পর্যটন ক্ষেত্র হুমকির মুখে পড়ায় সেগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে এবং দর্শনার্থীদের প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে। বন্যার স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে শহরের বহু সেতু। পানি জমে আইফেল টাওয়ারের নীচে তৈরি হয়েছে ছোটখাটো নদী। গোটা প্যারিস শহর জুড়েই তৈরি হয়েছে এই ‘জলছবি’। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভলস বলেছেন, শিল্প সাহিত্যের শহর আজ কার্যত পানিবন্দী। এখনো যেসব জায়গায় বন্যা পা রাখতে পারেনি সেসব স্থানেও দরজায় কড়া নাড়ছে বন্যা। ফ্রান্সের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাণবন্ত ছবি সেই আগের মতো নেই। সবাই যেন পানির হাত থেকে বাঁচতে চাইছে। স্যেন নদীর পানিস্তরের উচ্চতা গত ৩৫ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কোনো কোনো স্থানে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জলের অভাব। বিদ্যুত্ নেই অসংখ্য বাড়িতে। ডিঙি নৌকায় করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে ফ্রান্সের ট্রেন চলাচল। প্রভাব পড়ছে শহরের মেট্রো পরিষেবায়তেও। কর্মকর্তারা জানান, বন্যার পানি থেকে রক্ষা করতে পুরোদমে চলছে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার কাজ। প্যারিসের কর্মকর্তারা জানান, তারা স্যেন নদীর তীরে জরুরি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করছেন। এদিকে জার্মানিতে বেশ কয়েকটি শহর বন্যায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বন্যায় হতাহত ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। দুই দেশেরই আবহাওয়া বিভাগ সতর্ক করে বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফ্রান্সে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে উঁচু ও নিরাপদ স্থানে যাবার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। জানা গেছে, ফ্রান্সের স্যেন নদীর পানি এখন সাড়ে ৬ মিটার উচ্চতা দিয়ে বয়ে চলছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে জার্মানির দক্ষিণাঞ্চল, রোমানিয়া, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ড আর পোল্যান্ড। ১৯৮২ সালের পর স্যেন নদীর পানি এত উপর দিয়ে আর প্রবাহিত হয়নি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রিফটার্ন শহর নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে গাড়িসহ গাছপালা ও বাড়িঘরের আসবাবপত্রও ভেসে গেছে। অনেক স্থানে সড়ক থেকে কয়েক মিটার উচ্চতা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে রোট্টাল ইন জেলা। আকস্মিক এই বন্যার কারণে ট্রিফটার্ন শহরের একটি স্কুলে ২৫০ শিশু আটকা পড়ে ছিল। মঙ্গলবার সারারাত সেখানে অবস্থান শেষে বুধবার সন্ধ্যায় শিশুরা স্কুলভবন ত্যাগ করতে সক্ষম হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড কাজেনিউভ জানিয়েছেন, জরুরি উদ্ধারকর্মীরা বেলজিয়াম সীমান্তে এবং বারগান্ডি অঞ্চলে দুইদিনে ৮ হাজারেরও বেশি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছেন।
Source: www.ittefaq.com.bd/print-edition/antorjatik/2016/06/06/123833
Photo Source: www.ittefaq.com.bd/print-edition/antorjatik/2016/06/06/123833