ইবোলা- প্রয়োজন সাবধানতার
– Md. A. K .S. Meer
অতি সম্প্রতি সারা পৃথিবীতেই ইবোলা নামের প্রানঘাতি একটি ভাইরাস এর সংক্রমন নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেক আগে আবিস্কার করা হলেও ভাইরাসটির সাম্প্রতিক আক্রমনে তা পূর্বের সকল মাত্রা ছাড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ইবোলা ভাইরাস এবং এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা গেছেন। আর এখন শুধু আফ্রিকাতেই নয় বরং এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকা সহ সারাবিশ্বেই ইবোলা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত এসব দেশে ইবোলায় আক্রান্ত মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO); এ ভাইরাসটি ছোঁয়াচে এবং প্রানঘাতি হওয়ায় এর ভয়াবহতাও ব্যাপক। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী পাওয়া তথ্য অনুসারে এ বছরের মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত লাইবেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন, নাইজেরিয়া, এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৪,৯২২ জন মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে এবং উল্লিখিত দেশ গুলো সহ অন্য আরো কিছু দেশে সব মিলিয়ে ১৩,৭০৩ টির ও বেশী সংক্রমন সংক্রান্ত ঘটনা জানা গেছে। এমনকি নিরাপদ মনে করা অনেক দেশেও – যেমনঃ কানাডার আলবার্টা তে ইতোমধ্যেই একজনকে সনাক্ত করা হয়েছে এবং আমাদের দেশের আশেপাশের অনেক দেশেও (যেমন ভারতের চেন্নাইতে এবং অন্ধ্র প্রদেশে) ইবোলায় আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে ।
মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে ইবোলাভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। মার্বুগ ভাইরাসের সাথে এ ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যা ১৯৬৭ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিলো যে এটি মার্বুগ ভাইরাসের কোন নতুন স্ট্রেইন । ইবোলা ভাইরাসের পাঁচটি ভিন্ন নাম রয়েছে – ইবোলা-জায়ারে, ইবোলা-সুদান, ইবোলা-আইভোরি কোস্ট, ইবোলা-রেস্টন এবং ইবোলা-বুন্দিবুগিও। এ নামকরণগুলো ছড়িয়ে পড়া এলাকার নামানুসারে হয়েছে। প্রথম একসাথে ছড়িয়ে পরে ১৯৭৬ সালে সুদানের এবং কঙ্গোর গ্রামাঞ্চল থেকে। ইবোলা ভাইরাস গোত্রের ৫টির মধ্যে ৪টি প্রজাতি, মানুষের ও অন্যান্য ম্যামালদের শরীরে সংক্রমিত হয়ে গুরুতর অসুস্থ করার ক্ষমতা রাখে , বাকি ১টি প্রজাতি মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে ইবোলা জায়ারে । প্রথমবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানব মৃত্যুর হার ছিল শতকরা ৯০ শতাংশ !
ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ (EVD), ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার (EHF) বা শুধু ইবোলা হল ইবোলা ভাইরাসঘটিত রক্তপ্রদাহজনিত মনুষ্য রোগ যা একটি আরএনএ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়।কিছু প্রাণীর শরীরের রক্তে এ ভাইরাস বসবাস করে। বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে, যে সকল প্রাণী এ ভাইরাস বহন করছে সেগুলো মূলতঃ কয়েক প্রজাতির বানর অথবা কলা খায় এমন বাদুড়। এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে কোন সংক্রামিত পশুর রক্ত বা শরীরের যেকোন ফ্লুইড এর সংস্পর্শ থেকে। আফ্রিকায় বানর, শিম্পাঞ্জী এবং অন্যান্য নন-হিউম্যান প্রাইমেটদের মধ্যে ইবোলা ভাইরাস পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে বাতাসের মাধ্যমে অন্য কোন ফ্লু এর মতন এটির সংক্রমণের কোন খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি । ধারণা করা হয় বাদুর, বিশেষ করে ফল খায় এমন বাদুর নিজে আক্রান্ত না হয়ে এই রোগ বহন করে ও ছড়ায়। এর চেয়ে একটু কোমল স্ট্রেইনের ইবোলা ভাইরাস ফিলিপাইনে বানর ও শুকরের মধ্যে আবিস্কার করা হয়েছে।
ইবোলা যেভাবে ছড়িয়ে পরে
জীবিত পুরুষের বীর্য-এর মাধ্যমে এই রোগ প্রায় দুই মাস পর্যন্ত পরিবাহিত হতে সক্ষম। মানব শরীরে একবার সংক্রমণ ঘটলে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। আফ্রিকায় বানর, শিম্পাঞ্জী এবং ফলাহারী বাদুরের মধ্যে মার্বুগ ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। কোন সংক্রামিত প্রাণীর শরীর থেকেই প্রথম এ ভাইরাসটি মানবদেহে সংক্রামিত হয়। আক্রান্ত প্রানীর গোশত কাটা বা খাওয়ার মাধ্যমে কোন পর্যায়ে অথবা কোন গবেষক বা বিজ্ঞানী, যিনি আক্রান্ত প্রাণীর কোন ধরণের অপারেশান করেছেন বা গবেষণা করেছেন তাদেরকেই ভাইরাসটি প্রথম সংক্রামিত করে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।সিবিসি নিউজ পোর্টালে প্রকাশ হওয়া খবরে জানা যায়, আমেরিকার মতন উন্নত দেশে যথেস্ট সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির চিকিৎসা করতে থাকা চিকিৎসক এবং কয়েকজন নার্স কোন একটা পর্যায়ের সাময়িক অসাবধানতায় ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
আফ্রিকার অনেক দেশে প্রতি বছরই অনেক ট্যুরিস্ট ভ্রমন করতে যান। অনেক সময় তারা পাহারের মাঝে অনেক গুহা পরিদর্শনেই গিয়ে থাকেন । তাদের পাশাপাশি এসব দেশের খনিতে কর্মরত কোন শ্রমিক, কোন ভাবে আক্রান্ত কোন প্রাণীর বর্জ্যের সংস্পর্শে এসেও ইবোলা এবং মার্বুগ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে, কারণ এসব ক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার সম্ভাব্যতা অনেক বেশী । আক্রান্ত ব্যাক্তির অসুখের লক্ষণ প্রকাশ করতে যেটুকু দেরী হয়ে থাকে তার মধ্যেই অথবা অসুস্থ হওয়ার পরে তার পরিচর্যায় অথবা এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত ব্যক্তির দেহ সৎকারে সাধারনত পরিবার–পরিজন বা আত্মীয়সজনই করে থাকেন। এভাবেই ধীরে ধীরে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে খুব দ্রুতই বংশ বিস্তার করে ফেলে ভাইরাসটি । আফ্রিকার অনেক দেশই দরিদ্র হওয়ায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলোতে অনেক সময় একই সূচ ও সিরিঞ্জ একাধিক বার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসময় ঠিকমতন জীবাণুমুক্ত করে না নেওয়ার ফলেও ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে এক থেকে একাধিক মানবদেহে।
এ ভাইরাসের উপসর্গ ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার বা শুধু ইবোলা নামেই (Ebola Hemorrhagic Fever বা সংক্ষেপে EHF ) সমধিক পরিচিত। সাধারণতঃ লক্ষণগুলি ধরা পড়ে ভাইরাস সংক্রমণের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর । ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে নিরীহ ফ্লু’র মতো হালকা জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, পেশীর ব্যথা, শরীর ব্যথা অনুভব করে। সাধারণতঃ এর পর গা গোলানো, বমি, এবং ডায়েরিয়া হয়, সাথে লিভার ও কিডনীর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এই জায়গাতে এসে কিছু মানুষের রক্তপাতজনিত সমস্যা শুরু হয়। কিছুদিন পর তীব্র মাথা ব্যথা, জ্বর, শরীর ব্যথা, ত্বকে ফোস্কার মতন উঠা, কোন ক্ষেত্রে মুখে ঘা এবং মারাত্মক বমি শুরু হতে পারে। ভয়াবহ এই ভাইরাসটি মানবদেহে আক্রান্ত হবার পরে চূড়ান্ত পর্যায়ে দেহের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক রক্তপাত ঘটায়। লিভার, কিডনি সহ আরো অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া অকেজো করে দেয়, রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমিয়ে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত করে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু ঘটে।
ইবোলা আক্রান্ত হবার পরে বিভিন্ন উপসর্গ
ইবোলা ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশের পর ২ দিন থেকে প্রায় ৩ সপ্তাহ কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই অবস্থান করতে পারে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি এই রোগ নিয়ে চলে যেতে পারেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে। আর সেখানে রোগটি ছড়িয়ে দিতে পারেন নিজের অজান্তেই। তাই কারো উপরোক্ত কোনো উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে । রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে এটা ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস, কলেরা বা অন্য কোনো রোগের জীবাণুর কারণে হচ্ছে নাকি ভাইরাল আরএনএ বা কোন ভাইরাল অ্যান্টিবডির কারণে হচ্ছে।
রোগনিরূপণ করার জন্য সাধারণতঃ একই প্রকার লক্ষণযুক্ত অন্যান্য রোগ, যেমন, ম্যালেরিয়া, কলেরা এবং অন্যান্য ভাইরাল হেমোরেজিক ফিভারগুলিকে বাদ দিতে হয়। রোগনিরূপণকে নিশ্চিত করতে রক্তের নমুনাগুলির পরীক্ষা ভাইরাল অ্যান্টিবডি, ভাইরাল RNA, অথবা এই ভাইরাসটির জন্যই করতে হবে। ভাইরাসটির খুব একটা কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। নেই কোনো প্রতিষেধক টিকাও। এখন পর্যন্ত যে ভ্যাক্সিন আবিস্কার করা হয়েছে তা কিছু প্রাণীর দেহে কার্যকর হলেও মানবদেহের জন্য তা উপযোগী নয়। এই রোগের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই; আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে হয় ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি (পান করার জন্য সামান্য মিষ্টি ও নোনতা জল) দিয়ে নয়তো ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডদেওয়া হয়। এই রোগে মৃত্যু হার অত্যন্ত বেশি: প্রায়শ এই ভাইরাস আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ । এ ভাইরাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, সংক্রমিত হলে এই রোগের লক্ষণগুলো অন্য আরও অনেকগুলো রোগের লক্ষণের সাথে মিলে যায়! ফলে রোগ শনাক্ত করতে সময় লেগে যায়। তাই সঠিক রোগ শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়াটাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ! তবে যদি রোগ দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায় তাহলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় ।
রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আক্রান্ত বানর ও শূকরের থেকে মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ানো হ্রাস হওয়া দরকার। রোগ ধরা পড়লে এইরকম সংক্রমিত প্রাণীদের চিহ্নিত করে মেরে ফেলে দেহগুলি সঠিকভাবে বিনষ্ট করে ফেলার মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে। সঠিকভাবে রান্না হওয়া মাংস এবং মাংস নিয়ে কাজ করার সময় প্রতিরোধী পরিচ্ছদ পরা সহায়ক হতে পারে, একইভাবে যখন রোগগ্রস্ত কেউ কাছাকাছি থাকে তখন প্রতিরোধী পরিচ্ছদ পরা এবং ভালোমতন হাত ধোয়া প্রয়োজন। রোগগ্রস্ত ব্যক্তির শরীর এর যেকোন ফ্লুইড এবং কোষকলার নমুনা বিশেষ সতর্কতার সাথে নাড়াচাড়া করতে হবে। ইবোলা বায়ুবাহিত রোগ নয় কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত, লালা, ডায়রিয়া, বমি, পানি ইত্যাদির স্পর্শে এটি অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে ক্রমাগতভাবে রক্তক্ষরণ হয়। ডায়রিয়া ও বমিতে রক্তপাত হয়ে থাকে। নাক, মুখ এবং জননেন্দ্রীয়ের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ হয়। এসকল তরল অত্যন্ত সংক্রমণীয় যা খেয়াল রাখা উচিত সব সময়। আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না আসলে এই রোগে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা কম । চিকিৎসা করার ক্ষেত্রেও আগে যথাযথ ভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে অগ্রসর হওয়া উচিত ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ভাইরাস নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী । আক্রান্ত অনেক দেশ থেকেই প্রবাসীরা কোন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই দেশে চলে আসছেন । এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত, পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন । এছাড়া দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত ডাক্তার এবং নার্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা এবং দেশব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন ।
Md. A. K .S. Meer
meer200m@uregina.ca
তথ্যসুত্রঃ
১। http://en.wikipedia.org/wiki/Ebola_virus
২। http://en.wikipedia.org/wiki/Ebola_virus_disease
৪। http://www.bbc.com/news/world-us-canada-29836550
৫। http://www.bbc.com/news/world-africa-28754546
৬।http://i4.mirror.co.uk/incoming/article3944886.ece/alternates/s615/ebola-graphic.jpg
৭।http://www.trbimg.com/img-53dc5d5c/turbine/la-sci-g-ebola-patients-transmission-20140801/550/16×9
৯। http://media.treehugger.com/assets/images/2011/10/gorilla_bushmeat_468.jpg
১০।http://1.bp.blogspot.com/nVZ3u9rq01Q/U9nXSXbGYAI/AAAAAAAAJIo/MLDtazoZPvA/s1600/bushy.jpg
১১। http://www.cdc.gov/vhf/ebola/images/EBOLA_ecology_800px.jpg