চাতুলের চতুরতা
অধ্যাপক শফিক হায়দার ও মনোয়ার হোসেনের ফিল্ড গাইড অনুযায়ী Monkey Puzzle এর বাংলা নাম ‘চাতুল’। চাতুলের অনিন্দ্য সুন্দর পাখার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে সবাই। পুরুষ প্রজাতির ওপরের দিকটা কালচে বাদামী আর স্ত্রী প্রজাতিতে কিছুটা অনুজ্জ্বল ফ্যাকাশে বাদামী। সামনের ডানার ওপরের দিকে তিনটা সাদা ফুটকি আর পেছনের ডানার কিনারার দিকে লাল কিংবা কমলা রঙের এক সারি ফুটকি দেখা যায়। স্ত্রী প্রজাপতির নীচের দিকের সামনের পাখার কিনারার দিকটা উজ্জ্বল বাদামী এবং পাখার মাঝ বরাবর অর্ধবৃত্তাকারে সাদা যার অনুজ্জ্বল বাদামী, হলুদ রঙের দাগগুলো নীচের পাখনার দাগগুলোর সাথে এমনভাবে মিশে গেছে যেন তা শিল্পীর পরম আদরে আঁকা।
পুরুষ প্রজাতিতে সামনের পাখার কিনারার অংশ কালচে বাদামী হয়। উভয় পাখার নীচের দিকের বাইরের অংশে একসারি লম্বা অনুজ্জ্বল কমলা দাগ থাকে এবং ভেতরের দিকে সামনের পাখার মাঝ বরাবর এক সারি সাদা দাগ দেখা যায়। পেছনের পাখাতে সাদা ফিতার মতোন উজ্জ্বল তিন জোড়া লেজ থাকে যাদের মিলনস্থলে কালো রঙের বড় ফুটকির দেখা মেলে। এদের মুখমন্ডল সাদা ও চোখ কালো। সাদা ও কালো রঙের মিশেলে অপূর্ব সুন্দর এদের পা এবং এন্টেনা। দু’চোখের মাঝ বরাবর পাল্প নামক সংবেদী অংগ থাকে। আর পাখা বন্ধ অবস্থায় তিন জোড়া লেজ এমনভাবে থাকে যেন একজোড়া সামনের পা মাঝের লম্বা লেজ, জোড়া এন্টেনা এবং ওপরের খাটো জোড়া পাল্পের মতোন দেখায় একইসাথে লেজগুলোর মিলনস্থলের কালো ফোঁটা দেখতে অনেকটা চোখের মতোন হয়।
অধিকন্তু এটি উড়ে গিয়ে কোথাও বসেই লেজ খাঁড়া করে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে। যার ফলে পাখি ও অন্যান্য বিভিন্ন শিকারী প্রাণিরা খুব সহজেই ধাঁধাঁয় পড়ে যায় যেকোন দিকে মাথা আর কোন দিকটায় লেজ! একারণেইএই প্রজাপতির ইংরেজিনামকরণ Monkey Puzzle করা হয়েছিল। Lepidoptera বর্গের Lycanidae পরিবারের এই প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম Rathindaamor. এখন পর্যন্ত এদের কোন উপপ্রজাতির সন্ধান মেলেনি।এরা রংগন গাছে (Ixorasp) সাদা রঙের খুব ছোট ডিম পাড়ে ও গাছের পাতা খেয়েও এদের লার্ভা বেঁচে থাকে।
ঢাকা শহরের প্রজাপতি নিয়ে গবেষণারত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অমিত কুমার নিয়োগী বলেন, ‘Monkey Puzzle অনেকটা উপশহরাঞ্চলীয় প্রজাপতি হলেও এর বিস্তার ব্যাপক। ঢাকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের এটি একটি বেশ পরিচিত প্রজাতি। যদিও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে রাজধানী ঢাকায় এর আবাসস্থল অনেকটাই হুমকির মুখে।‘ বাংলাদেশ ছাড়াও আসাম, সিকিম, কোলকাতা, উড়িষ্যা ও দক্ষিণ ভারতেও এদের দেখা মেলে।
লিখেছেন-
২য় বর্ষ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।