পঞ্চগড়ে সৌর সেচ পাম্পের সাহায্যে বছরে তিন ফসল
মতিউর রহমান ও সাজ্জাদুর রহমান, পঞ্চগড় থেকে:
পঞ্চগড় জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার শত শত কৃষক স্বল্প খরচে সৌর বিদ্যুত্ ব্যবহার করে একরের পর একর জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছেন। কৃষকরা বছরে এক ফসলের স্থলে তিন ফসল আবাদ করছেন। জ্বালানি তেল নির্ভর বিদ্যুত্ নেই তো কি হয়েছে সূর্যের আলো আছে না। সূর্যের আলো এসে পড়ছে সোলার প্যানেলে আর সৌর শক্তির সাহায্যে উত্পাদিত বিদ্যুতে চলছে পাম্প। আর এই পাম্পের পানি দিয়ে শত শত বিঘা জমি সেচ দিয়ে আবাদ করা হয়েছে বোরো ধান। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানখেতগুলো এখন সোনালি রং ধারণ করতে শুরু করেছে। স্বল্প খরচে বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকদের চোখে মুখে এখন খুশির ঝিলিক। সোলার ইরিগেশন পদ্ধতি কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। প্রতিবছরই আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে, পতিত ও অনাবাদি জমিতে ফল ও ফসলের চাষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন শস্য চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষিতে বৈচিত্র্য আসায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। জানা গেছে, বছর পাঁচেক আগে বোদা উপজেলার বনগ্রাম ঠাকুরপাড়া ও শিকারপুর গ্রামের ৮১ জন কৃষক সর্বপ্রথম সৌর বিদ্যুত্ চালিত সেচ ব্যবস্থা চালু করে চাষাবাদ শুরু করেন। এতে লাভবান হওয়ায় এ সেচ প্রকল্প বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২২টি সোলার ইরিগেশন প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ১৫টি, রহিম আফরোজের ৫টি এবং এনারজি প্যাকের ২টি সোলার ইরিগেশন সিস্টেম স্থাপন করা হয়। বোদা উপজেলায় ১২টি, পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ১০টি এবং তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১টি সৌর সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এসব সেচ পাম্প দিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৩৫০ একর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। সৌর পাম্পের সাহায্যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। সারাবছর সময়মতো পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তাসহ অল্প খরচে একাধিক ফসল উত্পাদন করতে পারায় কৃষকদের মধ্যে সৌরশক্তি চালিত সেচ পাম্পের ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানে সোলার ইরিগেশন সিস্টেমের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা শত শত অনাবাদি ও পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছেন। বোরো ধান ছাড়াও কলা, ভুট্টা, বাদামসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন কৃষকরা। জেলার বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের বেংহারী ইসলামপুর কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. লুত্ফর রহমান জানান, তাদের এলাকায় পিডিবি ও আরইবি’র বিদ্যুত্ সংযোগ নেই। তাই আমরা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এখানে সোলার ইরিগেশন সিস্টেম স্থাপন করেছি। গত ৩ বছর ধরে এখানকার কৃষকরা সৌর সেচ সুবিধা নিয়ে ফসল উত্পাদন করে আসছে। একই উপজেলার মালিপাড়া কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনিছুর রহমান জানান, ডিজেল চালিত পাম্পের তুলনায় সৌর বিদ্যুতের সেচ পাম্পে খরচ অনেক কম। এই সেচ পাম্পের সাহায্যে বছরে কমপক্ষে ৩টি ফসল উত্পাদন করা সম্ভব হয়। তারা বর্তমানে ৫০ বিঘা জমিতে বছরে ৩টি ফল ও ফসল চাষাবাদ করছেন। সেচ খরচ হিসাবে প্রত্যেক কৃষককে সমিতিকে বছরে বিঘা প্রতি ৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। জেলার সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের নাককাটি কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মজিরউদ্দিন জানান, ডিজেলের সাহায্যে বোরো চাষাবাদে খরচ হতো ৪ হাজার টাকা। সৌর বিদ্যুত্ চালিত সেচ পাম্পে বোরো চাষে খরচ হয় মাত্র ২ হাজার টাকা। জগন্নাথপাড়া শিকারপাড়া কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিটি সোলার সেচ পাম্প স্থাপনে খরচ হয়েছে ২৮ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা। ফসল উত্পাদন শেষে কিস্তির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করছি। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ঠাকুরগাঁও শাখার ফাস্ট অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক মো. এনামুল হক জানান, ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১৪টি সমিতির আওতায় ১৫টি সোলার ইরিগেশন সিস্টেম স্থাপন করেছেন। এসব সমিতির সহস াধিক কৃষককে ১০ বছর মেয়াদি প্রায় ১৪ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতি ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
Source: www.ittefaq.com.bd/print-edition/last-page/2016/05/01/117230
Photo Source: www.ittefaq.com.bd/print-edition/last-page/2016/05/01/117230