প্রজাপতির বিভিন্ন ধরনের আচরণ
-মোঃ ফিরোজ আহমেদ
অনার্স (প্রাণিবিদ্যা), মার্স্টাস (বন্যপ্রাণিবিদ্যা), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মার্স্টাস, পরিবেশবিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সাধারণত গড় প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতি ২ সপ্তাহের মতো বেঁচে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারতম্য হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাতির মূল কাজ হচ্ছে খাওয়া এবং প্রজনন করা। ফিল্ডে গেলে প্রজাপতির আচরণগত যে বিষয়গুলো খুব লক্ষ্যনীয়ঃ
ক) বাস্কিংঃ
প্রজাপতিগুলো শীতল রক্তযুক্ত, মানে তারা তাদের বিপাক প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত তাপ উৎপন্ন করে না বা যতটুকু তাপ উৎপন্ন করে তা তাদের উড়ে যাওয়ার জন্য বা অন্য কাজের জন্য যথেষ্ট নয়। এজন্য প্রজাপতিগুলিকে শক্তির জন্য সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। এজন্য প্রজাপতিগুলোকে সূর্যের আলোতে পাখা প্রসারিত করে সূর্যের আলো থেকে শক্তি নিতে দেখা যায়। এভাবে তারা নিজেদের দেহের অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা থেকে বৃদ্ধি করতে পারে। এজন্যই হয়তো প্রজাপতির পাখার রং এতো উজ্জ্ব রঙিন হয়।
খ) নেক্টারিংঃ
প্রজাপতিগুলোতে চিবানোর জন্য কোন মুখোপাঙ্গ নেই। এক্ষেত্রে তারা তাদের প্রোবোসিসের মাধ্যমে চুমুক দিয়ে তরল জাতীয় খাবার গ্রহন করে। প্রজাপতি যখন খাবার গ্রহণ করে না তখন তার প্রোবোসিসটি মাথার নিচের দিকে কুঁকড়ানো অবস্থায় থাকে। প্রজাপতি যখন নেক্টারিং এর মাধ্যমে খাবার গ্রহণ করে তখন হাইড্রোস্ট্যাটিক চাপের ফলে কুঁকড়ানো প্রোবোসিসটি প্রসারিত হয় এবং ফুলের গভীর নলগুলোতে প্রবেশের মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহণ করে।
কিছুকিছু প্রজাপতি যেমন রেইন ফরেষ্ট এরিয়াতে পাওয়া যায়, যেখানে নেক্টারিং প্ল্যান্ট কম পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে প্রজাপতিগুলো বনের মেঝেতে পড়ে থাকা পচে যাওয়া ফলগুলো হতে পুষ্টিদ্রব্য গ্রহণ করে। বিশেষ করে Nymphalidae পরিবারের কিছু জেনাসের প্রজাপতির মধ্যে এরুপ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়।
গ) পাডলিংঃ
পাডলিং পুরুষ প্রজাপতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে পুরুষ প্রজাপতিগুলো ভেজা মাটি বা ভেজা বালি হতে তরল পুষ্টিদ্রব্য গ্রহণ করে। যে পানিযুক্ত স্থানে প্রজাপতিগুলো পাডলিং করে সেখান থেকে পানির সাথে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল/সল্ট গ্রহণ করে, যা পুরুষ প্রজাপতিগুলোর ফার্টিলিটি/উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ঘ) প্রজননঃ
প্রজনন প্রজাপতির একটি স্বাভাবিক এবং সাধারণ বৈশিষ্ট্য। প্রজননের আগে পুরুষ প্রজাপতি একটি নির্দিষ্ট এরিয়া বেছে নেয় এবং স্ত্রী প্রজাপতিকে আকর্ষন/ মেটিং করার জন্য ফেরোমেন হরমোন নিঃসৃত করে। স্ত্রী প্রজাপতি ফেরোমেন দ্বারা আকৃষ্ট হলে তারা কোর্টশিপে অংশগ্রহণ করে। এরপর যখন তারা প্রজননে অংশগ্রহণ করেন, শুরুতে পুরুষ প্রজাপতি পেটের দিকে থাকা classping organ এর সাহায্যে স্ত্রী প্রজাপতিকে সহজে আঁকড়ে ধরে। এরকম অবস্থায় তারা এক ঘন্টা বা তার বেশি অথবা সারা রাত ব্যাপী থাকতে পারে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরুষ প্রজাপতি থেকে শুক্রানু স্ত্রী প্রজাপতিতে স্থানান্তরিত হয়। শুকানু স্ত্রী প্রজাতির ডিম্ব থলিতে প্রবেশের পর সেখানেই নিষিক্ত হয়। পবের্তীতে স্ত্রী প্রজাপতি তাদের হোস্ট প্ল্যান্ট এ ডিম পাড়ে। এরপর ডিম একটি পরিপূর্ণ জীবনচক্রের মাধ্যমে লার্ভা (শুয়োপোকা/শূককীট), লার্ভা থেকে পিউপা (গুটিপোকা/মূককীট)এবং পিউপা থেকে একটি পুর্নাঙ্গ প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়।
রেফারেন্স : www.butterflyschool.org