গন্ধগোকুল

গন্ধগোকুল (ইংরেজি: Asian palm civet; বৈজ্ঞানিক নাম: Paradoxurus hermaphroditus) ‘সাধারণ বা এশীয় তাল খাটাশ’, ‘ভোন্দর’, ‘নোঙর’,‘সাইরেল’ বা ‘গাছ খাটাশ’ নামে পরিচিত। তালের রস বা তাড়ি পান করে বলে তাড়ি বা টডি বিড়াল নামেও পরিচিত। গন্ধগোকুল বর্তমানে অরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। পুরোনো গাছ, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে এই প্রাণীটি। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুলের বাস। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
এরা মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। নাকের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত ৯২-১১২ সেন্টিমিটার, এর মধ্যে লেজই ৪৪-৫৩ সেন্টিমিটার। লেজের দৈর্ঘ্য ৪৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আকার ৫৩ সেন্টিমিটার। ওজন ২.৪-৫.০ কেজি। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে গন্ধগ্রন্থি থাকে। গন্ধগোকুলের গাট্টাগোট্টা দেহটি স্থূল ও রুক্ষ বাদামি-ধূসর বা ধূসর-কালো লোমে আবৃত।
গন্ধগোকুল নিশাচর। খাটাশের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এরাই মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে। দিনের বেলা বড় কোনো গাছের ভূমি সমান্তরাল ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে, লেজটি ঝুলে থাকে নিচের দিকে। মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম-বাচ্চা-পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়। অন্য খাদ্যের অভাবে মুরগি-কবুতর ও ফল চুরি করে। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। গন্ধগোকুলের ধূসর রঙের এই প্রাণীটির অন্ধকারে অন্য প্রাণীর গায়ের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
এশিয়ান গন্ধগোকুল ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয় উপত্যকা, সাবাহ, সারাওয়াক, ব্রুনেই দারুসসালাম, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, জাভা, কালিম্যানতান, বইয়ান ও সিবেরাত এলাকায় স্থানীয়। ইরিয়ান জয়া, লেজার সুন্দ্রা দ্বীপপুঞ্জ, মালুকু, সুলাওজি এবং জাপানে এ প্রাণীর প্রাচীন আবাসস্থল।

তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ
ছবি এবং তথ্য সংগ্রহে : ইসতিয়াক আহমেদ সৈকত