নীলকণ্ঠ প্রজাপতি
‘প্রজাপতি, প্রজাপতি
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা?
টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা?’
প্রজাপতি নিয়ে এ গানটি তোমরা নিশ্চয় শুনেছো। গানটির কী আশ্চর্য ক্ষমতা! ওটা শুনলেই প্রজাপতির দেশে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, তাই না? গ্রামে-গঞ্জে এমনকি কর্মব্যস্ত শহরে হরেক রকমের প্রজাপতি দেখা যায়। প্রতি সপ্তাহে তোমাদের এমন একটি নতুন প্রজাপতির সঙ্গে পরিচয় করে দিই, তবে কেমন হবে বলো তো? নিশ্চয়ই ভালো। আজ তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই নীলকণ্ঠ প্রজাপতিকে।
প্যাপিলিওনিডি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এ প্রজাপতিটির বাংলা নাম নীলকণ্ঠ প্রজাপতি, ইংরেজি নাম কমন জে (Common Jay) আর বৈজ্ঞানিক নাম -Graphium doson (C. & R. Felder)। বছর দুয়েক আগে বলধা গার্ডেনে ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ করেই চোখে পড়ে গেল এ প্রজাপতিটি। নটর ডেম ন্যাচার স্টাডি ক্লাবের কয়েকজন উৎসাহী তরুণ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে সেবার বলধা গার্ডেনে গিয়েছিলাম গাছ, পাখি আর প্রজাপতি পর্যবেক্ষণ করতে। গার্ডেনের সিবিলী অংশে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই নিসর্গী বন্ধু শুহান সাঈদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে গেল দৃষ্টিনন্দন এ প্র্রজাপতিটি। আমাদের কাছে তখন কোনো ফিল্ড গাইড ছিল না। কাজেই অত্যন্ত সুদর্শন এ প্রজাপতিটির ছবি তোলা সম্ভব হলেও এটি তখন শনাক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
তোমাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে ফিল্ড গাইড আবার কি? ফিল্ড গাইড হচ্ছে গাছপালা, পাখি কিংবা প্রজাপতির রঙিন ছবিযুক্ত সহজে ব্যবহার করা যায় এমন এক ধরনের পকেট গাইড বই। আমরা যখন বনে-জঙ্গলে গাছপালা, পাখি, প্রজাপতি কিংবা অন্যান্য জীবজন্তু পর্যবেক্ষণে বের হই তখন পর্যবেক্ষণকৃত গাছপালা বা জীবজন্তুর পরিচয় জানতে ফিল্ড গাইডগুলো ব্যবহার করি। ফিল্ড গাইডে রঙিন ছবির পাশাপাশি এ সংক্রন্ত প্রচুর তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। কাজেই তাৎক্ষণিকভাবেই আমরা পর্যবেক্ষণকৃত জীবটি শনাক্ত করে ফেলতে পারি।
শুহান আমাকে দুদিন পরই ই-মেইল করে প্রজাপতির ছবিটি পাঠালো। কিন্তু প্রজাপতির ফিল্ড গাইড না থাকায় এতোদিন এ প্রজাপতিটির পরিচয় জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শাহবাগের আজিজ মার্কেটে বইয়ের দোকানে ঘুরতে ঘুরতে আমার হাতে আসে প্রজাপতির ওপর দারুণ একটা ফিল্ড গাইড। আইজাক কেহিমকরের লেখা দি বুক অফ ইন্ডিয়ান বাটারফ্লাইস (The Book of Indian Butterflies) ভারি চমৎকার এ ফিল্ড গাইডটি হাতে পেয়ে আমার সামনে খুলে গেল প্রজাপতিদের রাজ্যের সোপান। আমার কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে যতড়ব করে রেখে দেয়া প্রজাপতিটির এ ছবিটির পরিচয় জানতে পেরে খুব খুশি হয়েছি। তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হয়েছি হাট্টি মা টিম টিমের ছোট্ট বন্ধুদের নীলকণ্ঠ প্রজাপতির পরিচয় জানাতে পেরে।
এবারে এসো নীলকণ্ঠ প্রজাপতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অল্প কথায় কিছু জেনে নেয়া যাক। এর ডানার বিস্তার প্রায় ৭০-৮০ মিলিমিটার। এ প্রজাপতির ডানার পেছনের অংশ হঠাৎ করেই বেশ সরু হয়ে লেজের সঙ্গে মিশে গেছে। গায়ের রঙ কালো, তার ওপর হালকা নীল। ডানার ঠিক কেন্দ্রে আড়াআড়িভাবে গাঢ় হালকা নীল রঙের একটি ব্যান্ড রয়েছে যা বড় বড় কয়েকটি হালকা নীল রঙের ছোপ দিয়ে যুক্ত। ব্যান্ডটিকে ঘিরে ডানার কিনারার চারদিকে একই রঙের ছোট ছোট কিছু বিন্দু রয়েছে। মেয়ে ও পুরুষ প্রজাপতি দেখতে একই রকম। যে কোনো ফুলের বাগানে এদের খুব সহজেই চোখে পড়ে। স্বর্ণচাঁপা, উদয়পদ্ম ও দেবদারু গাছের পাতা এ প্রজাপতির লার্ভাদের ভীষণ প্রিয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান ও মিয়ানমারে এদের দেখতে পাওয়া যায়।