ভোঁদড়ের কুমির শিকার
সাপ ও কুমিরের যুদ্ধের কথা সবার কাছে অতি পরিচিত শোনালেও আজকে সবার সামনে এমন এক যুদ্ধের গল্প শোনাব যা শুনে সবাই রীতিমতোন আশ্চর্য হয়ে যাবে! ভোঁদড় ও কুমির, দুই বিপরীত মেরুর প্রাণি। এটা আমাদের সবারই জানা যে ভোঁদড় কুমিরের তুলনায় অনেক ছোট প্রাণি যে কিনা খাবারের জন্য মাছ শিকার করে আর কুমির কে ‘জলের বাঘ’ বলা যেতে পারে! কুমির লম্বায় ভোঁদড়ের তুলনায় কমপক্ষে ২ থেকে ৩ গুণ বড় হয়। কিছুদিন পূর্বে অ্যামেরিকার ফ্লোরিডাতে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে যার চিত্র জিওফ ওয়ালস নামক এক প্রত্যক্ষদর্শীর ক্যামেরাতে ফুটে উঠেছে।
ভোঁদড়ের মতোন সুন্দর স্তন্যপায়ী প্রাণি কুমির শিকার করবে!! ব্যপারটা হাস্যকর শোনা গেলেও সত্যিকারের অর্থেই ঘটেছে। আসলে বন্যপ্রাণিদের মধ্যে কতোই না আশ্চর্যের ভান্ডার লুকিয়ে আছে, তার কতোটুকুই বা আমরা জানি!! ভোঁদড় হচ্ছে এক ধরনের ভোজনপ্রিয় শিকারী প্রাণি। আবাসস্থলের বেশীরভাগ জুড়েই এরা সর্বচ্চ স্তরের শিকারী প্রাণি, আবার কুমিরও একই অর্থাৎ সর্বচ্চ স্তরের শিকারী প্রাণি। সুতরাং টিকে থাকার জন্য এই দুই প্রাণির মধ্যে যে সংঘর্ষ বাধবে এটা নিয়ে কোন দ্বিধা নেই তবুও এদের আকারের কথা চিন্তা করলে এমন যুদ্ধের কথা চিন্তা করাও অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতোন। এই কুমিরটি লম্বায় ছিল প্রায় পাঁচ ফুট আর ভোঁদড়টি যদি পুরুষ সদস্য হয়ে থাকে তাহলে তার ভর হবে ৩০ পাউন্ডের কাছাকাছি।
শিকার করা হচ্ছে ভোঁদড়দের প্রকৃতির কাছ থেকে শেখা আচরণ, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য জীবনের কোন এক পর্যায়ে শিখে নেয়। শেখার সময়ে এরা অনেকবারই অন্য প্রাণির কাছ থেকে আঘাত পায় এবং আস্তে আস্তে শিকারের ক্ষমতা প্রবল থেকে প্রবলতর হতে থাকে। কিন্তু এরা যতোই শিকারী প্রাণি হোক না কেন, সচরাচর সরীসৃপ প্রাণিকে আক্রমণ করতে যায়না কারণ সরীসৃপ প্রাণি শিকার অন্যান্য প্রাণি শিকারের থেকে হাজার গুণে কঠিন। কারণ সরীসৃপ প্রাণির অন্যতম বৈশিষ্ঠ হচ্ছে যে, এরা এদের ঘাড় ইচ্ছামতোন নাড়াতে পারে যা কিনা বেশীরভাগ প্রাণির জন্যই অসম্ভব। যার কারণে এদের শিকার করার ক্ষেত্রে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সরাসরি ঘাড়ে আক্রমণ করা ছাড়া এদের শিকার করা অসম্ভবের কাছাকাছি।
কুমিরের সারা শরীর শক্ত খোলকে আবৃত যার কারণে ভোঁদড়ের পক্ষে সরাসরি কামড় দিয়ে এদেরকে মেরে ফেলা সম্ভব নয়। যদি সরাসরি কামড় দিত তাহলে এর শরীরের শক্ত খোলক তা প্রতিহত করতো। এই দুই প্রজাতির প্রাণির রয়েছে শক্তির পার্থক্য। কুমিরের শক্তি অনেকটাই গ্রেনেডের মতোন, অনেক বিস্ফোরণ ঘটায় কিন্তু বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়না অপরদিকে ভোঁদড়ের শক্তির স্থায়িত্ব তুলনামূলক অনেক বেশী সময় যার কারণে ভোঁদড় একটানা অনেক সময় ধরে আক্রমণ করতে পারলেও কুমির খুব বেশি সময় এদের শক্তি ধরে রাখতে পারেনা। সুতরাং কুমির শিকারের প্রধান কৌশল হচ্ছে, এদেরকে সরাসরি ঘাড়ে আক্রমণ করা এবং অনেক সময় কামড় দিয়ে ধরা রাখা তাহলেই এক সময় এদের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এই ঘটনার ভোঁদড়টিও একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। কামড় দিয়ে প্রায় এক মিনিট ধরে ছিল যার কারণে এক মিনিট পরে কুমিরের শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। নিস্তেজ হবার প্রধান কারণ হচ্ছে ক্ষত স্থান থেকে ল্যাক্টিক এসিড নিঃসরণ শুরু হয়, আর এই নিঃসরণের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথেই কুমিড়ের শরীর অবশ হতে থাকে এবং এক সময় সমস্ত শরীরই প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এবং অল্প সময়ের মধ্যেই কুমিরটি মারা যায়। সব থেকে মজার বিষয় হচ্ছে, কুমিরটির মারা যাবার পেছনে প্রধান কারণ কিন্তু ভোঁদড় নয় বরং ল্যাক্টিক এসিডের নিঃসরণ। ভোঁদড়টি যদি এরকম না করে কামড়ে কুমির শিকারের কথা চিন্তা করতো তাহলে কখনোই সম্ভব হতো না কারণ কুমিরের শরীর শক্ত খোলক ভেদ করে সরাসরি মাংসপেশীতে আক্রমণ করতে অনেক বেগ পেতে হতো আর সময়ও অনেক বেশী লাগতো।
শিকার নিস্তেজ হয়ে যাবার পরে তীরে উঠিয়ে নেয় এবং তখন ধারালো দাঁত দিয়ে শিকারের শক্ত আইশ বিহীন অঞ্চলগুলো কামড়ে আলাদা করতে থাকে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এরা কি জীবিত শিকারের মাংস আলাদা করতে থাকে নাকি মৃত!! কুমিরের শরীর নিস্তেজ হয়ে যাবার পরে তীরে নিয়ে যেয়েই ভোঁদড় কাজ চালিয়ে যায়। যদি এদের মিলন সঙ্গিনী কিংবা বাচ্চা থাকে তাহলে তারাও এই খাবারের ভাগ পায়।
এইসব মারাত্মক শিকারী ভোঁদড়দের শিকারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন মাছ ও বিভিন্ন উভচর প্রাণি কিন্তু মাঝে মাঝে আকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এরা অন্যান্য প্রাণিও শিকার করে। অপরপক্ষে পূর্ণবয়স্ক কুমিরের ডিম বড় মাছ, কচ্ছপ ও বিভিন্ন শিকারী পাখি কতৃক চুরি হয়। আবার অনেকসময় বাচ্চা কুমির ববক্যাট, ভল্লুক কিংবা প্যান্থার এর শিকারে পরিণত হয়।