আগুনে বাজ


25 April, 2016

আ ন ম আমিনুর রহমান:

লেখক বাজ পাখিটিকে প্রথম দেখি কানাডায় ১৮ বছর আগে। শিকার ধরতে ওর ক্ষিপ্রগতি দেখে অবাক হয়েছিলাম। বাংলাদেশে ও আসে শীতে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে। এত বছরেও আমি ওর দেখা পাইনি। গত ৭ জানুয়ারি ২০১৬-এ নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার পথে এক চরে ওকে প্রথম দেখলাম। ঠিক তিন সপ্তাহ পর ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীর পদ্মার চরে ওর সঙ্গে ফের দেখা। প্রথমবার বেলা ১১টায় চর খানপুর যাওয়ার পথে চরের একটি মরা গাছের ডালে। দুপুরে নবগঙ্গার কাছে। আকাশে একঝাঁক কবুতর উড়ছিল। মুহূর্তে উল্কার গতিতে কোত্থেকে যেন বাজটি একটি কবুতরকে নখে গেঁথে নিয়ে ঠোঁট দিয়ে ওর ঘাড় মটকে দিল। শিকার শেষে বাজটি চরে নেমে এল। এরা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন পাখি আগুনে বাজ (Peregrine Falcon, Peregrine, Duck Hawk, Red-capped Falcon or Barbary Falcon)। বহেরি বাজ বা পেরিগ্রিন শাহিন নামেই পরিচিত। বাগেরহাটে এটি আগুনে বাজ বলে পরিচিত। শিকার ধরতে ঘণ্টায় ৩৮৯ মাইল বেগে ওড়ার রেকর্ড আছে। Accipitidae গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Falco peregrinus। আগুনে বাজের দৈর্ঘ্য ৩৪-৫৮ সেন্টিমিটার, প্রসারিত ডানা ৭৪-১২০ সেন্টিমিটার, ওজন ৫৫০-১৫০০ গ্রাম। দেখতে এক রকম হলেও স্ত্রী পুরুষের চেয়ে আকারে বড় এবং ওজনে বেশি। পিঠ ও ডানার লম্বা চোখা পালকগুলো নীলচে-কালো থেকে মেটে-ধূসর, ডানার পালকের আগা কালো। সাদা থেকে মরচে রঙের দেহতলে স্পষ্ট চিকন বাদামি-কালো বা কালো ডোরা। লেজের রং পিঠের মতোই, তবে সেখানেও স্পষ্ট চিকন কালো ডোরা। মাথা কালচে, মুখমণ্ডল সাদা ও গালে কালচে দাগ। পেট ও রানে কালো ডোরা। চোখ গাঢ় বাদামি। আগুনে বাজ এ দেশের বিরল পরিযায়ী পাখি। যদিও মেরু অঞ্চল ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব মহাদেশেই আছে, কিন্তু বেশ দুর্লভ। এরা মাঠ, চরাঞ্চল, তৃণভূমি ইত্যাদি পছন্দ করে। শীতকালে এ দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ প্রায় সব বিভাগেই দেখা যায়। একাকী বা জোড়ায় থাকে। কবুতর, জলজ পাখি, হাঁস, এমনকি রাজহাঁস শিকার করে খায়। প্রয়োজনে বাদুড়, খরগোশ, ইঁদুর ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ, কীটপতঙ্গ, এমনকি মাছও শিকার করতে পারে। মার্চ-মে প্রজননকাল। এরা মোটামুটি সারা জীবনের জন্য জোড় বাঁধে। খাড়া পর্বতের গায়ে, উঁচু গাছে বা উঁচু দালানে ডালপালা, ঘাস ও পশম দিয়ে মাচার মতো বাসা বানিয়ে তাতে তিন-পাঁচটি গাঢ় বাদামি ছোপযুক্ত সাদা থেকে ফ্যাকাশে লালচে-বাদামি ডিম পাড়ে। সচরাচর স্ত্রী একাই ৩৩-৩৫ দিন তা দিয়ে ডিম ফোটায়। বাচ্চারা ৩৯-৪৯ দিনে উড়তে শেখে। সচরাচর তিন-চার বছরে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। আয়ুষ্কাল প্রায় ১৩ বছর।

Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/840202

Photo Source: আ ন ম আমিনুর রহমান