ইপিফাইটিক ফার্ন

ইপিফাইটিক ফার্ণ(ড্রাইমোগ্লোসাম পিলোসেলোডিস)যেখানে ওভাল আকৃতির বন্ধ্যা পত্রবৎ অংশ

ইপিফাইটিক ফার্ণ(ড্রাইমোগ্লোসাম পিলোসেলোডিস)যেখানে ওভাল আকৃতির বন্ধ্যা পত্রবৎ অংশ

জলে স্থলে বাতাসে পানিতে সমুদ্রের তলদেশে কোথায় নেই উদ্ভিদ সর্বত্র এরা বিরাজমান। কিছু উদ্ভিদ অন্য উদ্ভিদের উপর সরাসরি বা আংশিক ভাবে নির্ভরশীল। আবার কখনো হোস্ট উদ্ভিদকে একেবারেই মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয় তাও বড় বড় বৃক্ষ গুলি (হোস্ট উদ্ভিদ) এইসব পরজীবী ও পরাশ্রয়ী দের বুকে ঠাই দিতে কখনোই কৃপণতা করে না। আবার কিছু উদ্ভিদ আছে কতক খালি চোখে দেখা যায় আর কতক লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায় বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়া এদের দেখা যায় না।
Polypodiaceae পরিবারের Drymoglossum piloselloides (ড্রাইমোগ্লোসাম পিলোসেলোডিস) এমনি এক ইপিফাইটিক উদ্ভিদ যার আবাসস্থল হল অন্য বৃক্ষের কাণ্ড ও শাখাপ্রশাখা। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ না করেই এরা অন্যের বাড়িতে বসবাস করে। তবে পরজীবীর তুলনায় এদের সৌজন্য বোধ একটু বেশি কেননা এরা হোস্ট উদ্ভিদকে কখনোই খাবারের জন্য বিরক্ত করেনা। এরা যদিও কখনোই বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করে না কিন্তু আবাসস্থল হিসেবে কখনোই মাটিতে বসবাস করতে একেবারেই পছন্দ করে না। এরা বড় বড় বৃক্ষের মগডালে বসে পথচারীকে সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতে একটুও কার্পণ্য করে না।
এতক্ষণ যার বর্ণনা করছিলাম এটি এক প্রকার রসালো ১ সেমি ব্যাসের চকচকে সবুজ বৃন্ত বিহীন Succulant পত্রযুক্ত ফার্ন সত্যি মনোমুগ্ধকর এক উদ্ভিদ দেখলেই যে কেউ এর প্রেমে পড়ে যাবেন খুব সহজেই। এইসব লতানো ফার্ন ও এর পত্র বিন্যাসে যে কেউ মুগ্ধ হবেন যাকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রাপ্ত ও সহজলভ্য epiphytic fern বলা হয়। কখনো এদের পত্র ওভাল আকারের হয় যা আসলে বন্ধ্যা পত্রবৎ অঙ্গ। এদের আশে পাশে ৩-১৫ সেমি লম্বা ও চিকন স্পোর বহনকারী বৃন্ত সহ fertile leaves (উর্বর পত্র) দেখা যায়। এদের চিকন ও লতানো কাণ্ডের মত অংশে star-shaped hair থাকে যা দিয়ে আদ্র পরিবেশ থেকে পানি সঞ্চয় করে রাখে। কি বিচিত্র একই অঙ্গে কত রূপ (!) যখন একটি বৃক্ষের সমস্ত কাণ্ডে এরা বাসা বাধে দেখলে মনে হয় যেন বৃক্ষগুলি টেরাকোটেড কারুকাজ খচিত সবুজ রঙের বসন সারা গায়ে জড়িয়ে রেখেছে।

প্রায় পনের সেমি লম্বা ও চিকন স্পোর বহনকারী বৃন্ত সহ fertile leaves(উর্বর পত্র)

প্রায় পনের সেমি লম্বা ও চিকন স্পোর বহনকারী বৃন্ত সহ fertile leaves(উর্বর পত্র)

এই ফার্ন প্রচলিত নিয়মে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেদের খাদ্য নিজেরা প্রস্তুত করে তবে প্রতিকুল পরিবেশে এরা অন্য পন্থা অবলম্বন করে। বাড়ি ভাড়া না দিলে কি হবে (!) এরা একটু বনেদি স্বভাবের কেননা আমরা জানি সালোক সংশ্লেষণকারী সকল উদ্ভিদ দিনের বেলা পত্র রন্ধ্র খোলা রাখে ও রাতে পত্র রন্ধ্র বন্ধ রাখে কিন্তু Drymoglossum piloselloides ফার্ন প্রতিকুল পরিবেশে প্রচলিত নিয়মের ঠিক উল্টোটা ঘটায় অর্থাৎ এরা CAM সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে। ইহা একটি Carbon fixation pathway যাহা শুষ্ক পরিবেশে (মরু উদ্ভিদ) কিছু উদ্ভিদের অভিযোজনের জন্য সরাসরি জড়িত।

প্রায় পনের সেমি লম্বা ও চিকন স্পোর বহনকারী বৃন্ত সহ fertile leaves(উর্বর পত্র)

প্রায় পনের সেমি লম্বা ও চিকন স্পোর বহনকারী বৃন্ত সহ fertile leaves(উর্বর পত্র)

অনেক দিন বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকার কারণে যখন পরিবেশ শুষ্ক হয়ে যায় তখন এই ফার্ন গুলির Evapotranspiration কমানোর জন্য পাতায় অবস্থিত স্টোম্যাটা দিনের বেলায় বন্ধ রাখে ও Co2 সংগ্রহের জন্য রাতের বেলা স্টোম্যাটা খোলা রাখে। সংগৃহীত কার্বন ডাই অক্সাইড 4-Carbon acid malate রূপে পত্রের অভ্যন্তরে Vacuoles এর মধ্যে জমা হয় ও দিনের বেলা এই malate Chloroplast এ গিয়ে সেখানে রূপান্তরিত হয়ে Co2 হয় যা সালোকসংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। পূর্বে সংগৃহীত (pre collected) কার্বন ডাই অক্সাইড RuBisCO enzyme এ ঘনীভূত হয়ে সালোকসংশ্লেষণের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

উর্বর পত্রে সোরাস

উর্বর পত্রে সোরাস

এই প্রক্রিয়াটি প্রথম আবিষ্কার করেন সুইস কেমিস্ট ও উদ্ভিদ শারীরতত্বের ছাত্র Nicolas Theodore de Saussure(1767-1845)।
এই পদ্ধতিতেই প্রতিকুল পরিবেশে ড্রাইমোগ্লোসাম পিলোসেলোডিস ফার্ন সালোকসংশ্লেষণ করে ও নিজেদের খাদ্য প্রস্তুত করে।

 

টীকা:

ইপিফাইটিক: যে সকল উদ্ভিদ বড় বড় বৃক্ষের কাণ্ডে বা শাখা প্রশাখায় জন্মে হোস্টের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন না করে প্রকৃতি(বাতাস ও বৃষ্টি)থেকে পুষ্টি আহরণ করে বেঁচে থাকে এদেরকে ইপিফাইট বলা হয়।
স্টোম্যাটা: পাতার (এবং কচি কাণ্ডের) ঊর্ধ্ব ও নিম্নতলের বহিঃত্বকে (এপিডার্মিসে) অবস্থিত দুটি রক্ষীকোষ দিয়ে পরিবেষ্টিত সূক্ষ্ম রন্ধ্রকে পত্র রন্ধ্র বা স্টোম্যাটা ( stomata, একবচনে stoma) বলে।
CAM: Crassulacean acid metabolism.
Carbon Fixation: জীব কর্তৃক অজৈব কার্বন(Co2)কে জৈব যৌগে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে Carbon fixation বলা হয়।
Succulant: এই শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে, Sucus মানে হল জুস। যে সব উদ্ভিদের পাতা মোটা ও রসালো।
Evaporation+Transpiration= Evapotranspiration.
Evaporation: (বাষ্পীভবন)মাটি থেকে বা প্লান্ট ক্যানপি থেকে পানি বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে চলে যাওয়া।
Transpiration: (বাস্পাকারে নির্গমন) গাছের মধ্যে পানি চলাচল ও বাস্পাকারে স্টোমাটা দিয়ে বের হয়ে পানির অপচয়।
Vacuole: উদ্ভিদ কোষে বায়ু বা রস পূর্ণ গহ্বর।
RuBisCO: রাইবোলোস-১,৫-বাইফসফেট কার্বোক্সিলেস/অক্সিজেনেস এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ইহা এক ধরনের এনজাইম যাহা কার্বন ফিক্সেশানের প্রথম ধাপে সরাসরি জড়িত থাকে।

★ যেহেতু সময় স্বল্পতার জন্য ফিল্ড ওয়ার্ক করা সম্ভব হয়নি তাই প্রবন্ধের সবগুলো ছবি গুগলের সৌজন্যে ব্যবহার করা হয়েছে।