কালাগির্দির সাথে সাক্ষাৎ
লেখা ও ছবি: Shafaet Alam Abir
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। দৈনন্দিনের মতো রিকশায় করে বাসায় যাওয়ার পথে আশেপাশের চড়ুই, শালিকের উড়াউড়ি দেখতে দেখতে যাচ্ছি। বাসার কাছে আসতেই রাস্তার পাশে পুড়নো দালানের বারান্দায় একটা অপরিচিত পাখি দেখলাম। ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝলাম এটা আমার পরিচিত কোন পাখি না। বাসায় এসে আমার যে পাখির বই আছে তা দেখে খুঁজে বের করলাম পাখিটির নাম কালা গির্দি। কিন্তু সাথে সাথে আফসোস হলো ক্যামেরা সাথে না থাকায় পাখিটার ছবি তুলতে পারলাম না। এক ঘণ্টা পর কোচিং এর জন্য যখন বের হলাম তখন মনে হলো একবার দেখে আসি। তখনই মনে হলো,ধুর। এতোক্ষণ কি পাখি বসে থাকবে? তাও কি মনে করে যখন পুরনো বাসার সামনে গেলাম আমি অবাক। আমার ভাগ্য মনে হয় খুব ভালো। যাওয়ার সাথে সাথেই দেখলাম মহাশয় পাশের তারে বসে আছে। এভাবেই কালাগির্দির সাথে আমার সাক্ষাৎ। এরপর তিনমাস প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সাক্ষাৎ হতো। কখনো ক্যামেরায় ছবি তুলেছি,কখনো মোবাইলে ভিডিও করেছি,কখনো ছবি না তুলে চুপ করে দাঁড়িয়ে পাখিটার নাচানাচি দেখেছি। Black Redstart পাখিটি আমাদের দেশে কালা গির্দি নামে পরিচিত। এটি এদেশে নিয়মিত পরিযায়ী পাখি।পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Phoenicurcus Ochruros. কালা গির্দি আকারে দোয়েলের মতো। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩-১৪.৫ সে.মি.,ওজন প্রায় ১২-২০ গ্রাম। পুরুষের দেহ লাল ও কালো। স্ত্রীর দেহ বাদামি হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের গাল,গলা,বুক ও ডানা কালো। মাথা ও পিঠ ধূসর রঙের হয়। পেট,লেজ লাল এবং কপালে সাদা লাইন থাকে। স্ত্রীর ক্ষেত্রে পুরো বুক,পিঠ,মাথা ও ডানা লালচে বাদামি। পিঠ কালচে ও লেজ লাল হয়। চোখ বাদামি এবং চঞ্চু কালচে বাদামি। পা কালচে বাদামি হয়ে থাকে। শীতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। বিভিন্ন রকম পোকা, ফলের বীজ খেয়ে থাকে। প্রজননের সময় স্ত্রী গির্দিকে আকর্ষণ করার জন্য পুরুষ পাখি ডাকাডাকি করে ও গান গায়। পুরুষ গির্দি বাসার স্থান নির্বাচন করলেও স্ত্রী পাখি বাসা বানায়। বাসায় স্ত্রী পাখি ৪ থেকে ৬ টি ডিম পাড়ে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি ১২ থেকে ১৭ দিন পর বাসা ত্যাগ করে।