গুটিতেই ঝরল আম- যশোরে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি


25 April, 2016

ফখরে আলম, যশোর:

গাছ ভরে মুকুল এসেছিল। আমের গুটিও হয়েছিল। কিন্তু সব গুটিই ঝরে গেছে। এ নিয়ে মাতম দেখা দিয়েছে বাগান মালিকদের মধ্যে। গুটিতেই স্বপ্ন ঝরে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে শত শত আমচাষি। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের ওষুধ স্প্রে করেও কোনো কাজ পাওয়া যায়নি। বৃহত্তর যশোরের আমবাগানে হপার পোকার আক্রমণের পর এক ধরনের ছত্রাকের প্রভাবে আমের প্রায় সব গুটিই ঝরে পড়েছে। এতে আমচাষিরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে। সরেজমিন যশোরের চাঁচড়া, ভাতুড়িয়া, শেখহাটি, পলাশী, মাহিদিয়া, খোলাডাঙ্গা, সাড়াপোলসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে আমের নতুন পাতা গজিয়েছে। কোনো গাছেই আম নেই। পুরনো পাতা ছত্রাকের আক্রমণে কালো হয়ে গেছে। গাছ থেকে এক ধরনের রস ঝরে পড়ছে, যা অনেকটা আঠালো ধরনের। যে গাছে ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে সেই গাছের গুটি দুই-চার দিনের মধ্যেই ঝরে পড়েছে। যশোর সদরের চাঁচড়া দারোগাবাড়ির আমবাগান এক লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন আহম্মদ আলী। তাঁর বাগানের ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি—সব জাতের আমই ঝরে পড়ছে। কয়েক দফা সেভিন, রিপকর্ড, হরমন, ডাইথন-এম ইত্যাদি ওষুধ স্প্রে করেও ফল ঝরা বন্ধ করতে পারেননি। আহম্মদ আলী বলেন, ‘আমার হাজার হাজার টাকা লোকসান হবে। এর-ওর কাছে শুনে গাছে স্প্রে করেছি। কিন্তু কোনো কৃষি কর্মকর্তা আমাদের খোঁজ নেননি। গাছে গাছে হপার পোকার আক্রমণ। পাতা কালো হয়ে সব আম পড়ে গেছে।’ একই গ্রামের নূর মোহাম্মদের ১২টি গাছের সব আম ঝরে গেছে। তিনিও কয়েকবার গাছে ওষুধ স্প্রে করে ফল টিকিয়ে রাখতে পারেননি। ছত্রাক তাঁর আমবাগান ধ্বংস করে দিয়েছে। শহরের রেলগেট তেঁতুলতলার নাসিমা আলমের বাগান, চাঁচড়ার পিডিবি অফিসের বাগান, নিয়ামুলের বাগানসহ বেশির ভাগ গাছই এখন আমশূন্য। এসব বাগানের গাছে প্রচুর পরিমাণ মুকুল এলেও আম নেই। শেখহাটি গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাগান, মাহিদিয়ার নূরু কাজীর বাগান, দত্তপাড়া গ্রামের নাজমুলের বাগানসহ আরো কয়েকটি বাগান ছত্রাকে সর্বনাশ করে দিয়েছে। যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া ব্লকের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ব্লকে ব্যাপক আকারে আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। নিয়মিত গাছে ওষুধ স্প্রে করেও কোনো কাজ হয়নি। চাঁচড়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাহাজত হোসেন বলেন, ‘এবার শুটি মোল্ড ছত্রাকের কারণে আমের সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার এলাকার বেশির ভাগ বাগানেরই আম ঝরে গেছে। আমচাষিরা আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তাদের আম টিকিয়ে রাখার পরামর্শও দিয়েছি। কিন্তু তাতে ফল ঝরা বন্ধ হয়নি।’ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় ১১ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব বাগানের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের রোজগার জড়িত। এ অঞ্চলের আমের সুনামও রয়েছে। কিন্তু গুটি ঝরে পড়ার কারণে আমচাষিদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। যে বাগান রয়েছে তার ৯০ শতাংশ বাগানে কোনো আম নেই। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গোয়ালদা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘দুইবার ওষুধ স্প্রে করেও আমার গাছের আম রক্ষা করতে পারিনি। হপার পোকা থেকেই ছত্রাক ছড়িয়েছে। আমরা আমচাষিদের ব্যাবিস্টিন স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তাতেও ফল ঝরা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এবার আমচাষিদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে।’

Source: www.kalerkantho.com/print-edition/priyo-desh/2016/04/25/351251

Photo Source: www.amadertangail.com