রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-৩

লেখক- আজহারুল ইসলাম খান।

বিচিত্র এই উদ্ভিদ জগৎ বিচিত্র তার আচার আচরন। বেঁচে থাকার পদ্বতি, ফুল ও ফলের সমারোহ এতটাই আলাদা আলাদা যে, তা বর্ননা করে শেষ করা খুবই কঠিন কাজ। কোন কোন উদ্ভিদ অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও আনুবীক্ষনিক(খালী চোখে দেখা যায় না)। কোন উদ্ভিদ আকারে অনেক বড় বহুদুর থেকেও এদের পরিস্কার দেখা যায় এবং এদের বিস্তার অনেক দুর পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ায় পিপারমেন্ট উদ্ভিদের উচ্চতা ৪৫০-৪৬৫ ফুট যুক্তরাস্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার Sequoia sempervirence নামক উদ্ভিদের উচ্চতা ১১৫ মিটার। কোলকাতার শিবপুর উদ্যানের বট বৃক্ষটি পরিধি ৯০০ ফুট।

তেমনি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম সপুস্পক গাছের মধ্যে ওলফিয়া আরিজাহ (Wolffia Arrhiza) বা খুদিপানা অন্যতম (এর চেয়েও ক্ষুদ্র ফুল আছে এ নিয়ে পরে বর্ণনা করছি) এটি বাংলাদেশের পুকুর,ডোবা ও বদ্ব জলাশয়ে জন্মে থাকে। ক্ষুদ্রতম ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদটি থ্যালাস প্রজাতির উদ্ভিদ। সবুজ বা হলুদাভ সবুজ বর্ণের এই উদ্ভিদটির কোনো মূল নেই। উদ্ভিদটির দৈর্ঘ্য ১ মিলি মিটার থেকে ৫ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুল সাধারণত উদ্ভিদটির ওপরের স্তরে জন্মে থাকে। এর একটি করে পুংকেশর ও গর্ভকেশর থাকে। এর সম্পূর্ণ পুষ্পবিন্যাসের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১ মিলি মিটার হয়ে থাকে। Wolffia শতকরা ৮০ ভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। এটি একটি উচ্চ প্রোটিন খাদ্য হিসেবে মানুষের জন্য উত্তম।

 

ওলফিয়া আরিজাহ এর চেয়েও ক্ষুদ্রতর সপুস্পক উদ্ভিদের নাম Arceothorium (আর্কিওথোরিয়াম) এটি Arceuthobium জেনাসের আওতাভুক্ত একে সাধারনত Dwarf Mistletoes নামে ডাকা হয়। এর প্রায় ৪২ টি প্রজাতী কনিফার উদ্ভিদের উপর Parasite হিসেবে জন্মে। এই উদ্ভিদের North America, Central America ও Africa তে দেখা মিলে। এদের মুল ও পাতা খুবই ছোট। একে দেখতে হলে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়।

ঠিক তার বিপরীত হলো রাফিসিয়া আরনলডি (Raffiesia arnoldii) নামক উদ্ভিদের ফুল। আজ পর্যন্ত যে ফুলটি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম বলে বিবেচিত হয়ে আসছে তা সুদূর সুমাত্রার এক জঙ্গলে ১৮১৮ খিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়। সুমাত্রার তৎকালীন বড়লাট Sir Stamford Raffles একদা সদলবলে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন Dr Joshep Arnold নামে বিখ্যাত প্রাণিতত্ত্ববিদ। তারা হাঁটতে হাঁটতে বেনকুলেন নামক এক জায়গায় এসে হাজির হন। সেখানে প্রকাণ্ড এক গাছের গোড়ায় অদ্ভুত রকম বড় এক ফুল দেখে তারা অবাক হয়ে যান। সভ্য সমাজের কোনো মানুষই তখন পর্যন্ত এতো বড়ো ফুল দেখেনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, Raffiesia নিজেই ফুল, নিজেই গাছ। গাছ বলতে এর বিশেষ কিছু নেই। গোটা গাছটা দেখতে মোটা সুতার মতো। এর স্থানে স্থানে ধরে থাকে বড়ো বড়ো একেকটি ফুল।

মূলত এটা পরজীবী উদ্ভিদ। অন্য কোনো গাছের শেকড়ের ওপর এর বীজ অঙ্কুরিত হয়। বয়স বাড়লে আসে বিরাট ফুটবল আকারের ফুল। এতে কুঁড়ি ধরে। ফুলের রং হয় অনেকটা বাদামি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পৃথিবীর বৃহত্তম ফুল হলেও এর ঘ্রাণ কিন্তু মোটেও সুমধুর নয়। গন্ধ অনেকটা পচা মাংসের মতো হয়ে থাকে। বহুদূর পর্যন্ত বাতাসে এর কুৎসিত গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ ফুলের সাধারণত মোটা মোটা পাঁচটি পাপড়ি থাকে। ফুলের ব্যাস দেড় থেকে তিন ফুট পর্যন্ত হয়। আর একেকটি ফুল ওজনে ৭-৮ কেজি হয়ে থাকে। বড়লাট Stamford Raffles ও আবিষ্কারক Joshep Arnold —এ দু’জনের নামের কিছু অংশ মিলিয়ে ফুলটির নাম রাখা হয় Raffiesia arnoldii এই ফুল আমাদের দেশে কখনও জন্মে না, মালয়েশিয়ায় প্রচুর দেখা যায়। গত বছরে মালয়েশিয়ার লাংকাওই কিলিম জিও ফরেস্ট পার্কে সৌভাগ্য ক্রমে এটা দেখার সুযোগ হয়েছিলো। আমাদের গাইড Azham Ahmed বর্ণনা করছিলো এর গন্ধ ও আকৃতি নিয়ে।

যুক্তরাস্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্লস জে. চেম্বারলেন বিশ্বের গাছপালার বয়স নির্নয়ের জন্য ২৬ বছর গবেষনা চালিয়ে এক প্রতিবেদন প্রনয়ন করেছেন তাঁর এই প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন অস্ট্রেলিয়ান Macrozamia প্রজাতি ১২-১৫হাজার বছর বেঁচে থাকে। অশ্বত্থ গাছ ২-৩হাজার বছর। Juniper বাঁচতে পারে ২ হাজার বছরের ও বেশী। লেবাননের Ceder বাঁচতে পারে ১৫০০ বছরের মত। এসব উদ্ভিদ হাজার হাজার বছর ধরে আমাদেরকে আমাদের পৃথিবী কে সজিব করে রাখছে অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে প্রাণবায়ু।

থ্যালাস—যে উদ্ভিদ পাতা, শাখা-প্রশাখা এবং মূলে বিন্যস্ত নয়।
কনিফার—পাইন জাতিয় উদ্ভিদ।
বেনকুলেন—City of west cost of Sumatra in Indonesia.
Macrozamia—সাইকাস জাতিয় নগ্নবীজি উদ্ভিদ।

রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-১

রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-২

রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-৪

ছবিঃ ইন্টারনেট।

অধিক পঠনের জন্যঃ
www.nature.com/articles/232495a0