শৈবাল ও মসের সহাবস্থান

সমাজে অনেক বিত্তবান আছেন তাঁদের অনেক কিছু আছে তবু আরো চাই, শহর ও গ্রামের বেশীর ভাগ জায়গা তাঁদের চাই, আবার তাঁরাই বাসস্থানের জন্য ভূসম্পত্তির জন্য বিভিন্ন রকমের কৌশল অবলম্বন করেন ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষের জায়গা ঠেলে নিজের জায়গার পরিধি বড় করে নিতে দিবারাত্রি ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু নিম্ন শ্রেণীর কতিপয় উদ্ভিদ পরস্পরকে জড়িয়ে চমৎকার সহাবস্থান করছে যুগ যুগান্তর ধরে। এদের কোন চাওয়া নেই, মোহ নেই, ঠেলাঠেলি নেই, শুধু এইটুকু চাওয়া বড় বড় বৃক্ষ গুলি যেন পরিমিত ছায়া প্রদান করে কেননা এই সব উদ্ভিদের প্রিয় আবাসস্থল হলো ছায়া যুক্ত পরিবেশের কোন পুরানো দেয়াল গাত্র অথবা বৃক্ষের কান্ড।

ছবিঃ লেখক নিজের।
লোকেশনঃ MCPSC Campus
১.ফিউনারিয়া মস
২.ফিউনারিয়া মস ও চিহ্নিত স্থানে BGA
৩.সবুজ শৈবালের জীবন চক্র (গুগলের সৌজন্যে)

শৈবাল যেহেতু মাইক্রোস্কোপিক উদ্ভিদ (অর্গানিজম) তাই খালি চোখে দেখে এদের সনাক্ত করা কঠিন তবে আবাসস্থলের উপর ভিত্তি করে বলা যায় স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত স্থানে মসের ফাকে ফাকে থকথকে জেলীর মত পিচ্ছিল এক প্রকার বস্তু জন্মিতে দেখা যায় তা হলো Blue green algae(BGA) বা Green algae(GA)। এখানে BGA ও GA বলা ছাড়া আর অন্য কোন সুযোগ নেই কারন ল্যাবে টেস্ট না করা পর্যন্ত এটি BGA বা GA ‘র কোন প্রজাতি তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। এছাড়া পথচলিতে পুরানো দেয়াল গাত্রে ও বড় বড় বৃক্ষের বাকলে মকমলের মত সবুজ গালিচা বিছানো যে নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদটি জন্মিতে দেখা যায় তা হলো মস। এদের হেবিট ও বাসস্থানের উপর ভিত্তি করে আমাদের শহরাঞ্চলের যান্ত্রিকতার ভিড়ে যে প্রজাতির মসটি বেশী পাওয়া যায় তা হলো ফিউনারিয়া মস যাদের প্রজননের জন্য পরিপক্ক অবস্থায় জননাঙ্গ উৎপন্ন করে। এই মসগুলি সাধারনত vegetative multiplication ও sexual reproduction এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। উদ্ভিদের শায়িত শাখা প্রশাখা গুলো মরে গিয়ে খাড়া শাখা প্রশাখা গুলি সতন্ত্র উদ্ভিদ হিসেবে বিস্তার লাভ করে। পাতার ফাকে খুবই ক্ষুদ্র গিমা (gemmae) থাকে এই গিমা গুলোই অনুকূল পরিবেশে নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়। পরিনত পুং জননাঙ্গ Anhteridium দেখতে club আকারের যেখান থেকে শুক্রানু নির্গত হয়ে স্ত্রী জননাঙ্গ Archrgonium এ পতিত হয় এবং নিষেক ঘটে ও নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়।

নীলাভ সবুজ শৈবালের (blue-green algae) সুনির্দিষ্ট বহুকোষীয় reproductive গঠন দেখা যায় না। এদের সবসময় উর্বর গ্যামেট উৎপাদনকারী কোষ থাকে। উপর্যুক্ত পরিবেশে এই গ্যামেট থেকেই নতুন অপত্য উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়। শৈবাল হলো এমন এক প্রকার উদ্ভিদ যাদের কখনোই আসল মূল, কান্ড ও পাতা থাকে না।ইংরেজিতে Algae শব্দটি হলো বহুবচন একে একবচনে Alga বলা হয়। শৈবাল জলজ (টেরিস্টেরিয়াল কিছু প্রজাতিও আছে) সালোকসংশ্লেষণে সক্ষম অপুষ্পুক উদ্ভিদ (অর্গানিজম)।

এইসব শৈবাল পরিবেশ গত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুকুর নদী নালা, ঝিলের পানিতে বসবাসরত যে সকল জীবের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় তাদের প্রধান যোগানদাতা হলো ইউনিসেলুলার শৈবাল গোষ্টি। যদি এইসব শৈবাল অক্সিজেন সরবরাহ না করে তাহলে পকুর, নদী ও বিভিন্ন জলাশয়ের ইকোসিস্টেম ধ্বংষ হয়ে যাবে। যেমন আমাদের বুডিগঙ্গা দুষণের ফলে সেখানকার পানিতে কোন প্রকার অক্সিজেন সরবরাহকারী শৈবাল ও ডায়াটম জন্মাতে পারে না তাই আজ সেখানে মাছ সহ অন্য কোন জলজ প্রাণীর অস্থিত্ব নেই। গ্রামাঞ্চলে পুকুরে গোসল করে যারা অভ্যস্ত তারা নিশ্চই দেখে থাকবেন যে পানিতে মরিচার মত এক প্রকার আস্তরন সারা পুকুর জুড়ে ভেসে বেড়ায়। আসলে এরা ডায়াটম জাতীয় মাইক্রো অর্গানিজম (এক কোষি শৈবাল) যা প্রতিনিয়ত সালোকসংশ্লেষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করছে। তবে এইসব ডায়াটম ও শৈবালের আধিক্য বেশী হলে এরা মরে গিয়ে পানিতে মৎস্যতুল্য দুর্গন্ধ ছড়ায় ও এক প্রকার টক্সিন নির্গত করে ফলে পানিতে বসবাসরত জলজ প্রাণী মারা যায়। এই পানিতে গোসল করলে ও পান করলে যথাক্রমে শরীর চুলকানো সহ বিভিন্ন রকমের চর্ম রোগ ও পেটের পীড়া মহামারি আকার দেখা দেয়।

দেয়াল গাত্রে বসবাসরত মস এদের রাইজয়েডের সাহায্যে পানি ধরে রাখে যেন সেখানে শৈবাল জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, অতঃপর এইসব মস ও শৈবালের নিচে জন্ম নেয় কিছু উপকারী অনুজীব ও কেঁচো যা মাটিতে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।আমাদের চারপাশে নিম্নশ্রেণীর এককোষী আনুবিক্ষনীক উদ্ভিদ থেকে শুরু করে বিশালাকার উন্নত শ্রেনীর যে কোন উদ্ভিদই হোক না কেন সবই পরস্পরের উপর সমভাবে নির্ভরশীল। আর এই সব উদ্ভিদ গোষ্টির উপর পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জীব মানুষ হিসেবে আমরা সরাসরি নির্ভরশীল।