স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি বেশি


25 April, 2016

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক আচরণ অনেক দিন দেখা যায়নি। সিলেট যখন টানা বৃষ্টি ও বন্যায় ভাসছে, তখন সারা দেশে চলছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। ১৮ দিন ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টি নেই। আর নগরগুলোতে যেন মরুর তাপ বয়ে চলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল রোববার রাজধানীর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ এই দুই তাপমাত্রাই ছিল এ সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। আর চলতি মাসে সিলেট বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দেশের বাকি অংশে ৭৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কৃষি বিভাগের প্রধান আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অস্বাভাবিক আচরণ করছে। সিলেটে হঠাৎ বন্যার কারণে বেশির ভাগ পাকা বোরো ধান মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। দেশের অন্যান্য এলাকায় মাঠে যে ফল ও ফসল আছে, সেখানে বাড়তি সেচ দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এই পরিস্থিতিকে আমরা আবহাওয়াগত খরা বলে থাকি।’ পানি আর বায়ুর এমন আচরণের পেছনে ‘এল নিনো’ কলকাঠি নাড়ছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা। এই এল নিনোর প্রভাবে দুই থেকে সাত বছর পরপর প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝ বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে উত্তাপ বেড়ে যায়। এতে বিশ্বের বায়ুপ্রবাহের গতিবিধি উল্টে-পাল্টে যায়। এ কারণে আফ্রিকা মহাদেশে ইতিমধ্যে তীব্র খরা দেখা দিয়েছে। ভারতেও চলছে খরা। আর বাংলাদেশেও ১৮ দিন ধরে দাবদাহ চলছে। এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ তাসলিমা ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিশাল এলাকাজুড়ে এল নিনোর প্রভাবে এই সময়ের স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে না। এই সময়ে বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা বাতাস দেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বজ্রবৃষ্টি সৃষ্টি করে। এবার হঠাৎ করে পশ্চিমা বায়ু এই সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ওই দখিনা বায়ুকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে ওই এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে আর সারা দেশ শুষ্ক খটখটে আবহাওয়া বিরাজ করছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এই বছর জুনে মৌসুমি বায়ু আসার আগ পর্যন্ত দেশে কম-বেশি শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। এপ্রিল ও মে এই দুই মাসের বড় অংশজুড়ে থেমে থেমে দাবদাহ বয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দাবদাহটি ১৮ দিন অতিক্রম করে গেছে। তিন দিন ধরে তাপপ্রবাহটি ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ এই দুই তাপমাত্রাই ছিল এই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গতকাল রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত সাত বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেশের ছয়টি জেলায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১১টি জেলায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছিল। আবহাওয়া-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়েদার নেটওয়ার্ক বিশ্বের বেশির ভাগ শহরের দৈনিক তাপমাত্রার দু্ই ধরনের হিসাব দেয়। পারদের উচ্চতা বাড়ার পরিমাণ এবং মানুষের অনুভূতিতে তার তীব্রতা দেখে তাপমাত্রা মাপা হয়। সংস্থাটির হিসাবে, পারদের ওঠা-নামার সঙ্গে অনুভূতির হেরফের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ফরিদপুর, রাজশাহী, মংলা, রাজশাহী, যশোর, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে আজও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর চাঁদপুর, নোয়াখালী, শ্রীমঙ্গল, রংপুর, বরিশাল ও ঢাকার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে যখন তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, তখন চট্টগ্রামে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। টানা এক সপ্তাহ ধরে তুমুল বৃষ্টির পর গতকাল সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে সামান্য। এ ছাড়া কক্সবাজার ও টেকনাফেও সামান্য বৃষ্টি হয়েছে।

Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/840193

Photo Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/840193