ছলনাময়ী উদ্ভিদ ধাইরা

ধাইরা

ধাইরা। ছবিঃ MN Meeroo. লোকেশনঃ মেহেরপুর।

আমাদের চারপাশে কত রকমের উদ্ভিদের ছড়াছড়ি। খালিচোখে দেখা যায় না এমন উদ্ভিদের কথা না হয় বাদই দিলাম, চোখে দেখা যায় সেগুলো অতি ক্ষুদে থেকে সুবিশাল মহীরুহ আকার আকৃতির, গঠনবৈশিষ্ট্যে এরা কত বিচিত্র। আমরা এদেরকে ভাগ করি নানাভাবে। কোনোটা বিরুৎ, কোনোটা গুল্ম, কোনোটা আবার বৃক্ষ। প্রবল প্রাণশক্তিতে ভরপুর এসব উদ্ভিদ কতভাবেই না নিজেদের বিকাশ ঘটায়। কিছু বৃক্ষ সোজা আকাশের দিকে বহুবাহু মেলে উঠে যায়। গুল্মগুলো মাঠে ঘাটে রাস্তার ধারে ঝুপড়ির মতো ঘনঝোঁপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কোমল কামনীয় বিরুৎগুলো একান্তে কানাকানি করে মাটির সঙ্গে। আবার এই সুবিশাল বৃক্ষগুলি তাদের ডালপালায় আশ্রয় দেয় অন্য সব পরজীবী ও পরাশ্রয়ি উদ্ভিদের। নিজেদের মধ্য কি চমৎাকার বুঝাপড়া! আমি অবিভুত হই এদের ইকোলজি,সহাবস্থান ও সিমবায়োসিস দেখে। আবার কিছু অর্ধ-পরজীবী ছলনার আশ্রয় নিয়ে প্রথমে দাঁড়ানোর স্থান করে নেয় তারপর ধীরে ধীরে বসার জায়গা করে নেয় পরিশেষে পুরা বাড়ি(এখানে হোস্ট উদ্ভিদ) দখল করে নেয়। সুধী পাঠক আপনাদের এমনি এক সেমি-প্যারাসাইটিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যা ধাইরা নামে পরিচিত।

এরা যে উদ্ভিদের উপর জন্মে তা থেকে পুস্টি আহরন করে বেচেঁ থাকে কিন্তু সালোক সংশ্লেষন করতে সক্ষম তাই এদেরকে সেমি-প্যারাসাইটিক প্লান্ট বলা হয়। যাকে ইংরেজিতে Honey Suckled Mistletoe বলে। বৈজ্ঞানিক নাম Dendrophthoe falcata এটি Loranthaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ।এদের আবাসের ভাল জায়াগা হচ্ছে বড় বা পুরোনো আম গাছ,বকুল গাছ এবং জিকা গাছ কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক দিনের পুরানো ফুরুস গাছেও এদের দখলদারিত্ব দেখা যায়। বাংলায় পরগাছা বলতে এটিই বেশি পরিচত। নভেম্বর ডিসেম্বর এর ফুলের ভরা মৌসুম। মগডালে সোনালী আলোয় লাল বা মেজেন্টা রঙের ফুল ফোটে। ভারত বাংলাদেশে বহুবিস্তৃত এর দুটি উপপ্রজাতি হচ্ছে মধুপায়ী ধাইরা (var. falcata) ও লাল মধুপায়ী ধাইরা (var. coccinea)।

Dendrophthoe falcata(ধাইরা) হলো রোমশ ও শাখাপ্রশাখা যুক্ত পেরিনিয়াল গুল্ম। এদের কান্ড খাড়া,মোটা ও চেপ্টা, যখন কোন হোস্ট উদ্ভিদকে আক্রমন করে তখন এদের নোড(Node) দেখা যায়। ধাইরা হোস্ট উদ্ভিদের উপর cluster form করে যার ঘন ও জঙ্গলময় বৃদ্বি খুব সহজেই হোস্ট উদ্ভিদকে গ্রাস করে নেয়। হোস্ট উদ্ভিদের যেখানে ধাইরা আক্রমন করে সেখানে Haustorium প্রবেশ করিয়ে দেয় ও সেই অংশটি টিউমারের মত স্ফীত হয়ে যায় যার আকার আকৃতি বয়সের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এহেন অবিচারের ফলে ২০-২৫ বছর বয়সের একটি হোস্ট বৃক্ষকে এরা মেরে ফেলতে পারে। কথায় আছে “সূঁচ হয়ে ঢুকে লাঙ্গলের ফাল হয়ে বের হয়” ধাইরা হলো সেই সূঁচ যখন হোস্টকে আক্রমন করে, যখন হোস্টের সারা দেহ জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে তখন সেই ধাইরা অন্য রূপ ধারন করে লাঙ্গলের ফাল হয়ে যায়।

ধাইরা

ধাইরা। ছবিঃ MN Meeroo. লোকেশনঃ মেহেরপুর।

Haustorium- parasitic plant এর মূল যা হোস্ট টিস্যুতে প্রবেশ করিয়ে পুস্টি আহরন করা হয়।
Node-কোন উদ্ভিদের প্রান্তিয় মুকুলকে নোড বলে। আড়াআড়ি ভাবে অবস্থিত মুকুল ও পাতা যা কান্ডের মধ্যে নির্দিস্ট অন্তর জন্মে তাকে নোড বলে।
Parasite- যা অন্য উদ্ভিদের উপর সম্পুর্ন ভাবে নির্ভরশীল। অর্থাৎ হোস্ট উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনিয় সকল পুস্টি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।
Semi-Parasite- এদেরকে আংশিক পরজীবী বলে। এরা অন্য উদ্ভিদের উপর ১০০% নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ হোস্ট উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনিয় সকল পুস্টি সংগ্রহ করে কিন্তু সালোকসংশ্লেষ করতেও সক্ষম।
পরগাছাঃ যে সব উদ্ভিদ সাধারনত অন্য উদ্ভিদের উপর জন্মে।
সিমবায়োসিসঃ দুটি উদ্ভিদের সহাবস্থান ও পরস্পর পরস্পরকে কোন ক্ষতি না করে একে অপরের উপর নির্ভর করে বেড়ে উঠা।