‘নিরাপদ’ আম রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে
চুক্তিভিত্তিক চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত ‘নিরাপদ’ আম ইউরোপে রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রথম চালান গেছে ইউরোপের তিন দেশ ইতালি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে। আজ মঙ্গলবার ভোরে দুই টন আমের একটি চালান জার্মানি যাওয়ার কথা। প্রাথমিকভাবে রপ্তানি হচ্ছে সাতক্ষীরার হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম। এরপরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন জাতের আম রপ্তানি করা হবে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে আম রপ্তানি নতুন নয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানিয়েছে, গত বছরও ৫২২ টন আম ইউরোপে রপ্তানি হয়েছে। তবে এত দিন সাধারণ বাগান অথবা বাজার থেকে কিনে আম রপ্তানি করা হতো। এবারই প্রথম ইউরোপে আম রপ্তানিতে চুক্তিভিত্তিক চাষ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নইলে কোনো রপ্তানিকারককে আম রপ্তানির জন্য ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট (পিসি) দিচ্ছে না ডিএই। গত বছর বাংলাদেশ থেকে কিছু আম নিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট। ওই আমগুলো চুক্তিভিত্তিক চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়েছিল। এর বাইরে সাধারণ রপ্তানিকারকেরাও প্রচলিত পদ্ধতিতে আম কিনে রপ্তানি করেছিলেন। ডিএই বলেছে, এর প্রায় ১২টি চালানে পোকামাকড় ও বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ (রেসিডিউ) মাত্রাতিরিক্ত হারে পাওয়া যাওয়ায় তা গ্রহণ করেনি ইউরোপীয় কমিশন। গত মৌসুমে সব দেশ মিলিয়ে ৭৮৭ টন আম রপ্তানি হয়েছিল। এ মৌসুমে বালাইমুক্ত আম উৎপাদনে আগে থেকেই উদ্যোগী হয় সরকার। বাগান বাছাই করে তাতে ডিএই, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন, বেসরকারি সংস্থা সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া এবং কয়েকজন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস (গ্যাপ) অনুসরণ ও চুক্তিভিত্তিক চাষ নিশ্চিত করা হয়। গ্যাপ বেসরকারিভাবে সৃষ্ট ও অনুসৃত একটি মানব্যবস্থা। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোকে পোশাক তৈরিতে যেমন কমপ্লায়েন্স বা সার্বিক মান অনুসরণ করতে হয়, তেমনি গ্যাপ অনুসরণ করলে ধনী দেশগুলোর সবজি ও ফলের বাজারে প্রবেশ করা সহজ হয়। আম রপ্তানির কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলে ওয়াহেদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, যারা গ্যাপ অনুসরণ করেছে, তাদের আম রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এভাবে রপ্তানি করতে পারলে বাংলাদেশের বদনাম কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আগামী বছর আরও ব্যাপকভাবে চুক্তিভিত্তিক চাষ ও গ্যাপ অনুসরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। জানা গেছে, এ মৌসুমে প্রথম আম রপ্তানি করেছে মেসার্স ইসলাম এন্টারপ্রাইজ। কোম্পানিটির মালিক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ মে তিনি ইতালি ও ফ্রান্সে প্রথম চালানে এক টন করে আম পাঠান। এরপরে যুক্তরাজ্যে একটি চালান পাঠানো হয়। এদিকে, জার্মানিতে রপ্তানির জন্য সাতক্ষীরার একটি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে তা রাতে বিমানবন্দরে এনেছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ন্যানো। কোম্পানিটির মালিক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে জার্মানিতে দুই টন আমের একটি চালান যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে ১০ লাখ ১৮ হাজার টন আম উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশ থেকে ফল রপ্তানিতে অবকাঠামো ঘাটতি দূর করতে দুটি উন্নত মানের ওয়্যারহাউস তৈরি করছে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক। সংস্থাটির সরবরাহ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. মজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তায় ওয়্যারহাউস দুটি নির্মাণ করা হবে। আগামী বছর ওয়্যারহাউস দুটি ব্যবহার করে আম রপ্তানি করা যাবে। এতে রপ্তানি অনেক বাড়বে। চুক্তিভিত্তিক চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত আম ঢাকার বাজারেও বিক্রি করা হচ্ছে। একটি চেইনশপ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ন্যানোর কাছ থেকে কিনে ‘প্রিমিয়াম’ আম হিসেবে তা বিক্রি করছে। দাম বেশি পাচ্ছেন কৃষক: ইউরোপে রপ্তানির জন্য আম চাষ করে সাধারণ বাজারের চেয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার শ্রীপতিপুর গ্রামের আমচাষি মো. আকবর আলী প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানির জন্য বিক্রি করে তিনি প্রতি কেজি আমের দাম পেয়েছেন প্রায় ৭৮ টাকা। গত বছর তাঁর বাগানের আম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। রপ্তানিকারক জহিরুল ইসলাম বলেন, ইতালি ও ফ্রান্সে প্রতি কেজি ল্যাংড়া ও হিমসাগরের দাম মিলছে সাড়ে তিন ইউরো, যা বাংলাদেশি ৩০০ টাকার কাছাকাছি।
Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/867079
Photo Source: mybeautifulbangladesh.blogspot.com <http://mybeautifulbangladesh.blogspot.com/2012/06/mango-fruit.html>