রহস্যময় উদ্ভিদ জগৎ-১
লেখক- আজহারুল ইসলাম খান।
কিহে বন্ধু তুমি দেখছি ডুমুরের ফুল হয়ে গেলে। অনেক দিন দেখা না হলে আমরা বন্ধু বান্ধবদের এভাবেই বলি। আবার বাংলা ব্যকরনে বাগধারা পড়েছি “ডুমুরের ফুল” অদৃশ্য কোন বস্তুকে বুঝানো হয়।
ডুমুরের কি সত্যি ফুল নেই? অদৃশ্য?
কথাটি মোটেও সত্য নয়। ডুমুর কাটলেই এর ফুল দেখা যাবে, তবে কাটার পূর্বে নয় । ডুমুরকে বলা হয় False fruit বা Multiple fruit. ডুমুর প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের পুষ্পবিন্যাস (Inflorescence)। আরও সঠিকভাবে বললে ডুমুর হচ্ছে “A stem of inflorescence which is enlarged and fleshy”, তাই বলা যায়, অনেক পুষ্পের সমাহারেই ডুমুর। ফুলের একক কোন সত্তা নেই। ডুমুরের ভিতরেই আছে বহুমাত্রিক প্রলেপের ফুল। ডুমুরের গোলাকৃতির চারধারকে যদি প্রাচীর ধরা হয় তাহলে এর ভেতরে মেয়েদের চুলের বেণীর মতো পুষ্পাক্ষ থাকে(ছবিতে দেখুন)।
ডুমুরের ওপরে থাকে পুরুষ ফুল যা সংখ্যায় বেশি। নিচে থাকে স্ত্রী ফুল এবং সংখ্যায় কম। ডুমুরের নিচের দিকে থাকে ছোট্ট ছিদ্র। এই ছিদ্রপথেই একধরনের পোকা (Wasp) প্রবেশ করে। এরা প্রথমে পুরুষ ফুলের ওপর ঘুরে বেড়ায়। পুরুষ ফুলের পরাগরেণু গায়ে নিয়ে স্ত্রী ফুলের ওপর দিয়ে হেঁটে যায় ও পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের ওপর পরে। এ ভাবেই পরাগায়ন হয়ে থাকে একটা সময়ে বীজে পরিণত হয়।
বিশেষজ্ঞরা রাতে বন্ধ ঘরে গাছপালা রাখতে নিষেধ করেন,কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন এই নিষেধাজ্ঞা(!) এর চমৎকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। উদ্ভিদ রাতে Co2 ছাড়ে ও O2 গ্রহন করে, ব্যাপারটা একটু অদ্ভুদ মনে হচ্ছে তাইনা? তাহলে কি উদ্ভিদ স্বার্থপরের মত আমাদের জন্য বরাদ্বকৃত O2 নিজেই ভক্ষন করে নেয়(!) সুধী পাঠক আসুন মূল আলোচনায় প্রবেশ করি ও ঘটনাটা জেনে নেই।
আমরা জানি যে, সালোকসংশ্লেষন এর মাধ্যমে উদ্ভিদ Co2 গ্রহন করে ও O2 উৎপন্ন করে। কিন্তু শ্বসনের সময় ঘটে উল্টা ঘটনা অর্থাৎ O2 ব্যবহার করে ও উৎপন্ন করে Co2। সালোকসংশ্লেষণ প্রধানত দিনের বেলায় হয় (in presence of sun light) কিন্তু উদ্ভিদের শ্বসন সর্বদাই(দিবা রাত্রি) চলতে থাকে। দিনের বেলায় সুর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যমে উৎপন্ন O2 এর পরিমান শ্বসনে সৃষ্ট Co2 এর তুলনায় অনেক বেশি, তাই বলা হয় যে, উদ্ভিদ দিনে O2 তৈরি করে আর রাতের বেলা সুর্যালোকের অভাবে সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ থাকে কিন্তু শ্বসন ঠিকই চলতে থাকে। ফলে উদ্ভিদ O2 নিজে ব্যবহার করে ও Co2 উৎপন্ন করে। আশা করি বিষয়টি সসকলের নিকট পরিস্কার। যেহেতু উদ্ভিদ রাতে Co2 উৎপন্ন করে আর O2 গ্রহন করে তাই বন্ধ ঘরে রাতের বেলা গাছপালা রাখতে মানা করা হয়।
আমরা জানি উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করে কিন্তু শুধুমাত্র ক্লোরোপ্লাস্টে খাদ্য তৈরী হয় কেন?
উদ্ভিদের ক্লোরোপ্লাস্টে P700( P700 or Photosystem I primary donor, where P stands for pigment) নামে একটি পিগমেন্ট থাকে। শুধুমাত্র এই পিগমেন্টই সূর্যরস্মির উপস্থিতিতে উত্তেজিত হয়ে একটি ইলেক্ট্রন দান করে। আর এই ইলেক্ট্রনটিই ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ার ১ম ইলেক্ট্রন গ্রহনের ফলে পরবর্তীতে ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে অর্থাত্ গাছের পাতায় খাদ্য তৈরি হয় । এই P700 পিগমেন্ট যেহেতু শুধুমাত্র ক্লোরোপ্লাস্ট তথা সবুজ প্লাস্টিডে থাকে এবং তাই খাদ্য তৈরীও শুধুমাত্র ক্লোরোপ্লাস্টেই হয় ।
আমরা কম বেশী সকলেই মধুর গুনাগুন জানি, যেহেতু এটি উৎকৃস্ট মানের প্রাকৃতিক খাবার সুতরাং সকলেরই খাঁটি মধুর প্রতি কম বেশী দুর্বলতা আছে। কিন্তু আমরা কি জানি অনেক দিন রেখে দেয়ার পরও মধু নষ্ট হয় না কেন?
কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। প্রাকৃতিক বায়ুবাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারন মধুতে পানির পরিমান থাকে খুব অল্প। প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আদ্রতা থাকে। আদ্রতার মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না।
এবার চলুন খাঁটি মধু কিভাবে সনাক্ত করা যায় দেখি। একটুকরা রুটিতে মধু মাখিয়ে যে কোন একটি কুকুরকে খেতে দিন যদি কুকুর মধু মিশ্রিত রুটি না খায় তাহলে আপনি নিশ্চিত যে এই মধু খাঁটি। সুধী পাঠক আমি এই বিষয়টির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন করতে পারবো না সুতরাং আমাকে ক্ষমা করবেন।
ডাক্তারের সরনাপন্ন হলেই উপদেশ, ফল মূল শাক সব্জী বেশি করে খাবেন। কিন্তু ফল ও সব্জীর মধ্যে পার্থক্য কি? কি বলেন মনে প্রশ্ন জাগে না(!)
ফলঃ ফল হলো একটি সপুষ্পক গাছের ফুলের পরিণত ডিম্বাশয়। যেমন–আম, জাম, পেঁপে,লিচু, কলা,বড়ই ইত্যাদি
সবজিঃ সবজি হলো গাছের যে কোন ভক্ষন যোগ্য অংশ।
যেমন পাতা–যে কোন শাক,
মূল–গাজর,মুলা,শালগম ইত্যাদি
কন্দ–আলু,পেঁয়াজ ইত্যাদি।
যদিও এখানে কিছু ব্যাতিক্রম আছে যেমন টমেটো একটি ফল কিন্তু সাধারণত এটিকে সবজি হিসেবে ধরা হয়।
Multiple fruits(also called collective fruits)–Multiple fruits are fruiting bodies formed from a cluster of fruiting flowers, the inflorescence. Each flower in the inflorescence produces a fruit, but these mature into a single mass in which each flower has produced a true fruit. After flowering the mass is called an infructescence.
Wasp–wasp is any insect of the order Hymenoptera and suborder Apocrita that is neither a bee nor an ant.
O2–অক্সিজেন।
Co2–কার্বন ডাই অক্সাইড।
Plasmolysis(Plasma+o+Lysis)–The shrinking of protoplasm away from the cell wall of a plant or bacterium due to water loss from osmosis, thereby resulting in gaps between the cell wall and cell membrane.
ইস্ট (Yeast)–একপ্রকার এককোষী ছত্রাক। বেশির ভাগ ইস্ট উচ্চ শ্রেনীর অ্যাসকোমাইসিটিস এর অন্তর্ভূক্ত।
ছবি সংগ্রহঃ ইন্টারনেট।