আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও গ্রীস্মের তাপদাহ

সবুজে শ্যামলে পরিপুর্ন ধানমন্ডি লেক।

সবুজে শ্যামলে পরিপুর্ন ধানমন্ডি লেক।

জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। ঢাকা সিটিতে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা নগরায়নের কারনে আজ আমাদের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যেখানে বিশ্বের সব উন্নত নগরীতে পরিকল্পিত ভাবে বৃক্ষের আচ্ছাদন তৈরী করা হয় যার ক্যানপিতে গড়ে উঠে একটি শ্যামল স্নিগ্ধ শহর কিন্তু আমাদের শহরে নতুন রাস্তা, হাউজিং, স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন সরকারী বেসরকারি দপ্তর তৈরি করতে যেয়ে প্রতিবছরই কেটে ফেলা হচ্ছে বহু বছর ধরে বেড়ে উঠা বৃক্ষ। যেখানেই উন্নতির ছোঁয়া লাগছে সেখানেই বৃক্ষ নিধন এ কেমন সভ্যতা! এ কেমন উন্নতি! একবারও আমরা কেউ ভেবে দেখছি না এই বৃক্ষগুলিকে বাঁচিয়ে রেখে বিকল্প কোন পথ বের করা যায় কিনা।

উদ্ভিদরাজী বিহীন ঢাকার একটি রাজপথ।

উদ্ভিদরাজী বিহীন ঢাকার একটি রাজপথ।

আমরা আজ বিশেষ হুমকির সম্মুখিন কেননা বৃক্ষ নিধন করে আমরা নিজেরাই আমাদের বিপদ ডেকে আনছি। ঢাকা শহরে ইট, পাথর, ধাতবপাত,এলোমেনিয়াম ও কাঁচের তৈরি সুউচ্চ ইমারত গুলোতে সরাসরি সুর্যালোক পড়ে প্রচন্ড ভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আমাদের পরিবেশ। যে কোন এলাকার প্রাকৃতিক ভাবে সৃস্ট তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রন করতে হলে দরকার সবুজ শ্যামল পরিবেশ আর এই ধরনের পরিবেশের প্রধান নিয়ামক হলো উদ্ভিদরাজী ও জলাধার। আমাদের দেশে আমরা সামান্যতম একটি জলাধারকেও ভরাট করে নগর নির্মান করছি কিন্তু একবারও ভেবে দেখার চেস্টাও করছি না যে সৃস্ট তাপমাত্রা কিভাবে শোষিত হবে। আর জলাধার না থাকার কারনে মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে ফলে যা কিছু উদ্ভিদ আছে সেগুলোও আজ বিপন্ন প্রজাতিতে পরিনত হওয়ার উপক্রম।

ক'দিন আগেও যেখানে সবুজে শ্যামলে পরিপুর্ন ছিলো কিন্তু এখন শুধুই কংকাল।

ক’দিন আগেও যেখানে সবুজে শ্যামলে পরিপুর্ন ছিলো কিন্তু এখন শুধুই কংকাল।

আমাদের যে কয়টি হাইওয়ে আছে যদি চলার পথে একটু নজর দেয়া যায় তাহলে ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়ে। রাস্তার দু’পাশের সবুজ গাছপালা গুলি হঠাৎ কংকাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি এর কারন অনুসন্ধান করতে যেয়ে দেখলাম কে বা কাহারা সারা শহরের বর্জ্য রাস্তার পাশে এইসব গাছের গোড়ায় ফেলছে একসময় রাস্তার পাশে বিশালাকার বর্জ্যের পাহাড় সৃস্টি হয়ে রাস্তায় ভেসোকন্সট্রিকশন হচ্ছে এমতাবস্থায় কোথা হতে যেন কিছু বান্ধব এসে জমাকৃত বর্জ্যের স্তুপে দাহ্য পদার্থ ঢেলে অগ্নি সংযোগ ঘটিয়ে রাস্তার ভেসোডাইলেশন করে পথচারিদের বিশেষ উপকার করছেন। ফলশ্রুতিতে সব সবুজ শ্যামল জ্বলে পুড়ে ছাড়খার। এক সময় দেখা যায় এর আশে পাশে ছোট্র একটা কুঠির উঠিয়ে জনকল্যানে নিয়োজিত হয়েছেন কিছু মানুষ। হায়রে আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশ…!!

আমাদের দুষিত বুড়িগঙ্গা

আমাদের দুষিত বুড়িগঙ্গা

ধ্বংশ হলো সেই এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা। এইসব সুউচ্চ বৃক্ষে বসবাসরত প্রানীকুল বিপন্ন হলো আর এই সব প্রানীকুলের উপর যে সকল ছোট ছোট প্রানীরা নির্ভরশীল তারাও নিঃশেষ হলো আর রইলো বাকী মনুষ্যকুল। ধ্বংশ হলো ফুড চেইন পরিনামে মানুষের রোগ ব্যাধি দিন দিন বেড়েই চলছে। ফুড চেইন ধ্বংশের কারনে কিছু কিছু বিশেষ প্রজাতির পোকা মাকড় মৌমাছি প্রজাপতি বিপন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে উদ্ভিদের পরাগায়ন সঠিক ভাবে না হওয়াতে অঞ্চল ভেদে কিছু প্রজাতির ঔষধী উদ্ভিদ নিঃশ্চিন্ন হয়ে গেলো। এহেন পরিস্থিতিতে এমন একটা সময় আসবে যখন আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রয়োজনীয় পুস্টির অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকার কারনে সামান্য সর্দি জ্বর হয়ে পটল তুলতে যাবে। কেননা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারানোর ফলে যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে করতে একসময় সব কিছুই রেজিস্টেন্ট হয়ে যাবে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি আমরা দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না তবে এই ভেবে গা শিহরিয়ে উঠে আমরা আমাদের আগত প্রজন্মের জন্য কি রেখে যাচ্ছি!

আমার ছেলেবেলায় আষাঢ় মাসে ধান ক্ষেতের আলে উনিয়া(উইন্যা হলো বাঁশের তৈরি মাছ ধরার যন্ত্র) পেতে ও জলাধারে পলো দিয়ে যে পরিমান মাছ ধরেছি আজকাল তা কল্পনা করাও মহা অন্যায়। আমাদের জলাশয়ের ইকোলজি ইকোসিস্টেম ধ্বংশ করে দেয়া হয়েছে। এইসব জলাশয়ে প্রান নিয়ে কোন প্রানী বেঁচে থাকতে পারেনা। উদাহরন তো আমাদের বুড়িগঙ্গা। তাহলে বলুন আমাদের নতুন প্রজন্ম কই পাবে সেই দারকিনা মাছ শরপুটি মাছ? তাহলে কি ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষম জাতি গঠন হবে? সময় এসেছে ভেবে দেখার,সময় এসেছে সবুজ শ্যামলকে রক্ষা করার। না হয় সে দিন আর বেশী দুরে নয় আমরা আমাদের তৈরি ফাঁদে পা দিয়ে মরবো।

ইটের ভাটায় দুষিত হচ্ছে আমাদের পরিবেশ।

ইটের ভাটায় দুষিত হচ্ছে আমাদের পরিবেশ।

Bio-diversity, Ecology, Habitat ইত্যাকার নানা শব্দ আমাদের ভাষার জগতে খুব চালু আছে। প্রতিবছর বসে বিশ্ব ধরিত্রী সন্মেলন। Bio-diversity রক্ষার্থে পাস করা হয় নানা আইন কানুন। কিন্তু মুনাফা খোর এই পুঁজিবাদী সমাজে কোনকিছুই কার্যকর হয়না। সবুজ বিপ্লবের নাম দিয়ে ধ্বংস করা হয় প্রাণিবৈচিত্র। এরকম একরৈখিক উন্নতি আমার মত অতি অল্প জ্ঞানেই ধরে নেয়া যায় এটা ভাল এটা খারাপ বা ব্যবসার খাতিরে ঢালাওভাবে Monoculture মোটেও সুখকর নয়।

আবার কেউ কেউ আছেন যাদের এসব নিয়ে দার্শনিকভাব ও তৎপরতায় সোচ্চার। “সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্ত” এমন বাণী দ্বারা জগৎ জোড়া আলোড়ন তুলেছিলেন গৌতম বুদ্ধ। কই আমরা কি মেনেছি এই বাণী? চলুন এই ধরিত্রীর আশ্রয়ে থেকে সবুজ শ্যামলের ভালবাসায় জীবজন্ম সুখময় করে তুলি।