পরবাসিনীর সাথে কিছুক্ষন

লেখক- আজহারুল ইসলাম খান।

উদ্ভিদকে দিয়ে যদি তার মনের কথাগুলো কোন প্ররোচনায় কাগজ কলমের মধ্য দিয়ে লিপিবদ্ব করে নিতে পারতাম তাহলে হয়ত বুঝতে পারতাম তার আকুতি তার চাওয়া পাওয়া। কিন্তু এই ভাবনা এখন জেগে স্বপ্ন দেখার মত। হয়ত ভবিষ্যতে এমন কোন এক সফটওয়্যার আবিস্কার হবে ইসিজি যন্ত্রের মত গাছের ডালপালা অথবা লতা পাতায় লাগিয়ে দিলে তার চাওয়া পাওয়া সহ সব সমস্যা সাদা কাগজে প্রিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসবে।

প্রতিদিন আমার যাত্রা পথ মিরপুর সাড়ে এগারোর সড়ক দ্বীপের মাঝখানে এমনই এক মিরাকেল উদ্ভিদ আমাকে ডেকে কি যেন বলতে চায় আমি তার ভাষা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাই। কিন্তু আজ আমি নাছোড় বান্দা হয়ে অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলাম তার অব্যর্থ ভাষা উপলব্ধির জন্য। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম না জেনে আমি পথ ছাড়ছিনে। এক পর্যায়ে আবিস্কার করলাম স্বর্নলতা তার আশ্রয়দাতা বাগানবিলাসে ভর করে আছে কিন্তু দুজনেই খুব কস্টে দিনাতিপাত করছে। খুব অভিমান করে আমায় সুধালো তোমরা কি দেখতে পাওনা আমার আশ্রয়দাতার এহেন করুন পরিনতি শুধু পানির অভাবে। আমার আশ্রয়দাতার জন্য কিছু একটা কর কারন আমি যে পরজীবী, না হয় আমার অস্তিত্ব হুমকিস্বরূপ। আমি তাকে সুধালাম তুমি তো আমার লাল টুকটুক ফুলে পল্লবে প্রস্ফুটিত প্রকৃতির অংগহানি করছ, হঠাৎ পরজীবী রেগে গিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল, অনেকক্ষন মিনতি করে মান ভাংগালাম। পরজীবী মুখ খুললো।

ফটোগ্রাফীঃ নিজ।
ছবি লোকেশনঃ মিরপুর সাড়ে এগারো।

প্রথমেই উইলিয়াম রক্সবার্গের নাম উচ্চারন করলো, আমি তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে, আমাকে বলতে শুরু করলো তুমি হে অতী ক্ষুদ্র একজন কিন্তু রক্সবার্গ আমাকে সম্মান করে আমার সুন্দর নাম দিয়েছেন কুসকুটা রিফ্লেক্সা(Cuscuta refelxa Roxb) ও বিখ্যাত Covolvulaceae পরিবারের সন্মানিত সদস্য হিসেবে স্থান দিয়েছেন। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি বলতে শুরু করলো তার ঔষধি গুনাগুন নিয়ে। তোমরা মানব জাতিরা আমাকে ব্যবহার করছ এলোপেশিয়া এরিয়েটায়, গর্ভপাতে, প্রজনন ক্ষমতা রহিতে,এসিটামিনোফেনের বিষক্রিয়া থেকে লিভারকে রক্ষা করতে, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে, স্কিন ক্যানসার রহিতে, এন্টিভাইরাল,ভাংগা হাড়ের জোড়া লাগাতে, জন্ডিসে, ইপিলিপসিতে এছাড়াও বের করে নিয়েছ আমার উপক্ষার, এনজাইম ও মুল্যবান ক্যামিকেল যা তোমাদের কল্যানে ব্যবহার করছ। তাহলে কেন অবজ্ঞা ভরে দেখছ আমায়।

কি যেন মনে করে কতক্ষন চুপ থেকে একটার পর একটা তার উপক্ষার গুলোর নাম বলতে লাগলো আমি একেবারে চুপ।
(১) Methylcytisine
(২) Cuscuti acid
(৩) Alpha-glucosidase
(৪) Stigmasterol
(৫) Campesterol
(৬) Myricetin glucoside
(৭) Linolic acid ইত্যাদি।
আমি বিস্মিয় হয়ে তার কথা শ্রবন করছিলাম। এক পর্যায়ে লজ্জাবনত চিত্তে সুধালাম তোমার আশ্রয়দাতাকে শত কাজের মাঝে পানি না দিয়ে ভুল করেছি আমায় ক্ষমা করো হে বন্ধু আমার। আবারো ক্ষেপে গিয়ে কোন এক কবির লেখা দু-চরন শুনিয়ে দিলো….

নাচেন ভালা সুন্দরী লো
বাঁধেন ভালা চুল
যেন হেলিয়া দুলিয়া পড়ে
নাগকেশরের ফুল।

সতর্কীকরণঃ যে কোনো ভেষজ ঔষধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।